আহমদ আবদুল্লাহ: সম্প্রতি ভারতের নতুন পার্লামেন্ট ভবনে দেখা গেছে বর্তমান ভারতের নয়, বরং ‘অখণ্ড ভারত’-এর মানচিত্র। এতে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান প্রভৃতি রাষ্ট্রে এ নিয়ে খানিকটা সমালোচনাও হয়। কারণ, নয়া পার্লামেন্ট ভবনে ভারতের ওই মানচিত্রে এই দেশগুলিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। যাই হোক, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হলেও বরাবরই রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বলে আসছে, তাদের লক্ষ্য ‘অখণ্ড ভারত’। এই অখণ্ড ভারতে রয়েছে উপমহাদেশের দেশগুলি।
নাগপুরে ছাত্রদের এক সমাবেশে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত বলেন, আগামী বছরগুলিতে ‘অখণ্ড ভারত’ বাস্তবে রূপায়িত হবে। আরএসএস-এর সরসংঘচালক (প্রধান) মোহন ভাগবত বলেন, ‘যদি আপনারা ‘অখণ্ড ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যান, তাহলে দেখবেন এই প্রজন্মের সময়কালেই ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ, বর্তমানে যে ধরনের পরিস্থিতি গড়ে উঠেছে, যারা ইন্ডিয়া থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল, তারা এখন উপলব্ধি করছে, তাদের ভুল হয়েছিল।
তারা এখন মনে করছে, আমাদের পুনরায় ইন্ডিয়ায় যুক্ত হতে হবে। তারা আরও মনে করছে, তাদের ভারতভুক্ত হওয়ার জন্য মানচিত্রের রেখাচিত্রগুলি মুছে দিতে হবে। আর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়াই হচ্ছে স্বাভাবিক বিষয়।’
এর আগে মোহন ভাগবত ইন্ডিয়া শধটির বদলে ভারত শধ যুক্ত করার পক্ষে জোর সওয়াল করেন। এ ছাড়া সম্প্রতি মোহন ভাগবত ঘোষণা করেছেন, ভারত হচ্ছে ‘একটি হিন্দু রাষ্ট্র’। ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তি হচ্ছে ‘হিন্দু’।
তবে মোহন ভাগবত নাগপুরের ওই সভায় দেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থাকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত সমাজে বৈষম্য থাকবে ততদিন সংরক্ষণ বজায় রাখতে হবে।
যত হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আছে তার সবগুলির নিয়ন্ত্রণ সংঘ-পরিবারের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে দেশের বর্তমান শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টিও (বিজেপি) রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আরএসএস-এর একজন সদস্য।
তবে অনেকেই বলছেন, আরএসএস পার্শ্ববর্তী দেশগুলিকে নিয়ে ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন করতে পারলে কিছুটা সুবিধাও হবে। মানচিত্রের ভেদরেখা মুছে গেলে যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুরই সুবিধা হবে। তবে অন্যান্য দেশগুলি নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচিতি, জাতীয়তাবোধ, ভাষা ও ধর্মসত্তা বিলুপ্ত করতে রাজি হবে কি না, তা এক বড় প্রশ্ন। আর একটি বিষয় হল, ‘অখণ্ড ভারতে’ মুসলিমদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশের ১৮ কোটি, পাকিস্তানে ২০ কোটি। সেক্ষেত্রে অখণ্ড ভারতে মুসলিম সংখ্যা পৌঁছে যাবে প্রায় ৬০ কোটিতে! আরও একটি সমস্যা, এরপর যদি আমরা আফগানিস্তানকেও আরএসএস-এর পরিকল্পনামতো অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেই সেক্ষেত্রে মুসলিম জনসংখ্যা তো আরও বাড়বে, উপরন্তু দুর্ধষ আফগানদের কতটা কাবু করা যাবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তবু অনেকে বলছেন, এই দেশগুলিকে অখণ্ড ভারতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে দেশের সামরিক ব্যয় অনেক কমে যাবে। মোহন ভাগবত বলেই দিয়েছেন, অচিরেই অখণ্ড ভারতের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে।