পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠকে একটি নির্দিষ্ট দিনকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বসম্মতিতে পৌঁছানো গেল না। কিন্তু এ দিনের সর্বদল বৈঠক থেকে সর্বসম্মতিক্রমে ২০ জুনকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে গ্রহণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে। বরং কেন্দ্রের উদ্যোগের পেছনে একটা রাজনৈতিক ইন্ধন আছে বলে মনে করেছে মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘরে উপস্থিত সমস্ত রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্টরা। এ দিন যদি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সমর্থন পাওয়া গিয়েছে পয়লা বৈশাখের পক্ষেই।
অধ্যাপক সুগত বসু সাফ বললেন, ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে আমাদের মনে হয় বাংলা দিবস হিসাবে একটা অন্য শুভ দিন বেছে নেওয়া উচিত। আমার মনে হয় দিনটা পয়লা বৈশাখ হলে ভালই হয়। তিনি নৃসিংহদার কথা প্রসঙ্গে বলেন, রাখি বন্ধন কিন্তু রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন ১৬ অক্টোবর। কারণ সেই দিন কার্জন সাহেব বঙ্গবঙ্গ করে দিয়েছিলেন। প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ রাখি বন্ধন হয়। তাই বাংলার সংস্কৃতির কথা মাথায় রাখলে পয়লা বৈশাখকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে বিবেচনা করলে ভাল হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন, যদি কোনওদিন বেছে নিতে হয় তাহলে বলব ১৯ আগস্টের কথা ভাবা যেতে পারে। কারণ সেদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সুভাষচন্দ্র বসু একইসঙ্গে মহাজাতির আবাহন করেছিলেন এই কলকাতা শহরে। অন্যদিকে কবি সুবোধ সরকার, রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, কামতাপুরি আকাদেমির প্রতিনিধি, নাখোদা মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে সকলেই পয়লা বৈশাখের কথা বলেন।
অন্যদিকে নিজেদের ‘প্রকৃত সনাতনী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল’ হিসেবে দাবি করে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। সংগঠনের পক্ষে চন্দ্রচূড়বাবু বলেন, ‘আমরা কোনও সাধারণ রাজনৈতিক দল নই। আজ মিডিয়ার দৌলতে যারা সনাতনী জাতীয়তাবাদের কথা বলছে, তারা যাদের পিতা মানে, তাদের সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের জন্ম হয়েছে আমাদের থেকেই। আরএসএস বা বিজেপি বা অন্য যে কোনও রাজনৈতিক দল যদি আমার বাংলাকে ভাগ করতে চায়, তাহলে সবার আগে রুখে দাঁড়াবে যে রাজনৈতিক দল, তা অবশ্যই অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা।’ বিজেপি চাইছে ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন হোক। কিন্তু, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা এ দিন জানিয়ে দিল, তারা পয়লা বৈশাখের পক্ষেই।
এই দিনের বৈঠকে শুরু থেকেই অনুপস্থিত ছিল সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির মত প্রথম সারির রাজনৈতিক দলগুলো। তবে এ দিন এই বৈঠকে ছিল একদা সরকারের জোটসঙ্গী এসইউসিআই এবং সিপিআই-এমএল। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা, বিভিন্ন ভাষা ও সাহিত্য আকাডেমির প্রতিনিধিরা। ছিলেন শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, কলাকুশলীদের একাংশ। ছিলেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সদস্যরাও। আর ছিলেন সুগত বসু, চন্দ্র বসু, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, সুবোধ সরকার, শুভাপ্রসন্নের মতো বুদ্ধিজীবী। বিভিন্ন বণিকসভার সদস্যরাও।
এ দিন এই বৈঠকের শুরুতেই সিপিএম এবং কংগ্রেসের মতো ইন্ডিয়া জোটে থাকা দলগুলির অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে তড়িঘড়ি আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০ জুন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে নির্দেশিকা পর্যন্ত জারি করেছে। আমাদের জানাইনি। এখন বাংলার ব্যাপার বাংলা জানবে না। তড়িঘড়ি, এই জন্যই তো করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সময়ে যদি আপনি প্রতিবাদটা না করেন, তাহলে কিন্তু এই বেআইনি জিনিসটাই আইনত হয়ে যাব। এটাই স্থায়ী হয়ে যাবে। ২০ জুন নাকি বাংলার প্রতিষ্ঠা দিবস! আমি তো জীবনে শুনিনি। আমরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে প্রতিবাদপত্র লিখেছি।
এ দিন দিনের শেষে যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে কোনও একটি দিনে নামে সর্বসম্মত হওয়া যায়নি, তাই এখানে উপস্থিত সমস্ত প্রতিনিধিদের আগামী ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে। সকলের মতামত বিবেচনা করে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব নিয়ে আসবে রাজ্য সরকার। যা রাজ্য বিধানসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাশ করা হবে। এ দিন এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।