( সেখ কুতুবউদ্দিন): পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ডব্লিউবিসিএস-২০২১ এর গ্রুপ ‘এ’ এবং গ্রুপ ‘বি’ মিলে মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ১১৬ জন। এর মধ্যে মুসলিম প্রার্থীদের পাশের সংখ্যা ২৪। শতকরা পাশের হার ২০ শতাংশ। ডব্লিউবিসিএস-এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয় ২০২১ সালে। ২০২২ সালের মে মাসে মেইন পরীক্ষা হয়। তার পর হয় ইন্টারভিউ। শুক্রবার ডব্লিউবিসিএস গ্রুপ ‘এ’ এবং গ্রু ‘বি’ এর চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়।
ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভে পাশ করেছেন ৪০ জন,এর মধ্যে ৭ জন মুসলিম। অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার অব রেভিনিউ-এ উত্তীর্ণ ৩৯, এর মধ্যে মুসলিম ৫। কো-অপারেটিভ সার্ভিস-এ ৬ জনের মধ্যে ১ জন মুসলিম। এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসে ৭ জনের মধ্যে ২ জন মুসলিম।
মুহাম্মদ আকিল খান। ডব্লিউবিসিএস গ্রুপ এ -এর এক্সিকিউটিভ-এর ২১ তম স্থান দখল করেছে। আকিল-এর বাড়ি বর্ধমান শহরের পীরবাহারামে। এ’ন ডব্লিউবিসিএস-এর গ্রুপ সি’র জিএসটি অফিসার। তাঁর ইচ্ছা ছিল এক্সিকিউটিভ অফিসার হওয়া। কেন এই ইচ্ছা এই প্রসঙ্গে আকিল বলেন, ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল এক্সিকিউটিভ অফিসার হওয়া। সেই ইচ্ছা পূরণ হল, ভালো লাগছে। এর অবদান আমার আব্বা ও মা এবং পরিবারের সকলে। পাশাপাশি অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশনের অবদানও উল্লেখযোগ্য।
এদিন গ্রুপ ‘বি’র চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে ২৪ জনের তালিকা প্রকাশ করে পিএসসি। এর মধ্যে মুসলিম রয়েছেন ৭ জন। গ্রুপ ‘বি’এর তালিকায় প্রথম হয়েছেন মুহাম্মদ রিয়াজ হোসেন। গ্রুপ ‘এ’ এবং গ্রুপ ‘বি’ মিলে সার্বিকভাবে তাঁর স্থান দ্বিতীয়। দ্বিতীয় স্থানে সুব্রত দাস, তৃতীয় রজত কুমার ঘোষ এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছেন আতিয়া রহমান।
ডব্লিউবিসিএস গ্রুপ ‘বি’তে প্রথম স্থান অধিকার করলেন মুহাম্মদ রিয়াজ। হুগলির চুচুড়ার বাসিন্দা রিয়াজ ২০১৯ সালে ডব্লিউবিসিএস এর গ্রুপ ‘সি’ তে উত্তীর্ণ হয়ে এখন বীরভূমের আহমদপুরে ক্যানেল রেভিনিউ অফিসাব হিসেবে কর্মরত। তাঁর ইচ্ছা ছিল ডিএসপি হওয়ার। এখন সেই ইচ্ছা পূরণ হল তাঁর। ডিএসপি হওয়ার ইচ্ছা প্রসঙ্গে রিয়াজ বলেন, আব্বা এনসিসি’র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আব্বার কাছ থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এই সাফল্যের পিছনে সৈদুল ইসলাম স্যার ও শামীম স্যারের অবদান অনস্বীকার্য। এঁদের জন্যই আমার এই সাফল্য। আমার ইচ্ছা একজন সৎ, কর্মনিষ্ট এবং নির্ভীক পুলিশ অফিসার হওয়া।
আতিয়া রহমান। ডব্লিউবিসিএস গ্রুপ ‘বি’ পরীক্ষার ফলে চতুর্থ। পিএসসির সার্বিক ফলে র্যাঙ্ক ৯। বাড়ি কলকাতার পার্ক সার্কাসের লেডিস পার্কের কাছে। আতিয়ার ইচ্ছা ইউপিএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়া। কিন্তু রাজ্যের পিএসসি পরিচালিত ডব্লিুউবিসিএস পরীক্ষায় বসে তিনি সফল হয়েছেন। ডিএসপি বা পুলিশ আধিকারিক হওয়ার মূল ইচ্ছার কারণ হিসেবে আতিয়া বলেন, পুলিশ দফতরে সাধারণত মেয়েদের যোগদান কম থাকে। তাছাড়া মুসলিম পরিবারের মেয়েরাও এই কাজে এগিয়ে আসে না। আমার ইচ্ছা এই পদে থেকে নিজের কমিউনিটির পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষদের সঠিক ভাবে পরিসেবা দেওয়া। আমি চাই , আমাকে দেখতে মুসলিম পরিবারের মেয়েরাও যাতে পুলিশ বা অন্য বড় র্যাঙ্কের চাকরি গ্রহণ করতে আগ্রহী হতে পারেন। এই সাফলের পিছনে রয়েছেন ‘আল্লাহ’। তাছাড়া রয়েছেন আব্বা মুকলেসুর রহমান এবং মা সবনম বানুর অনুপ্রেরণা। এই সাফল্যে অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন, জিডি স্টাডি সার্কেল, আল-আমীন ও হজ হাউসের অবদান উল্লে’যোগ্য।
সদ্য প্রকাশিত ‘এ’ ও ‘বি’ গ্রুপের ফলে আবারও নজর করা সাফল্য পেল কলেজ স্ট্রিটের একাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৪ জন চূড়ান্তভাবে সফল হয়েছে, যার মধ্যে ‘এ’ গ্রুপে ২৪ জন এবং ‘বি’ গ্রুপে ১০ জন। অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে সফল হয়ে বিডিও পদে যোগ দেবেন ১১ জন ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রুপ ‘বি’তে সফল হয়ে ডিএসপি পদে যোগ দেবেন ১০ জন ছাত্রছাত্রী। ডিএসপি পদে প্রথম, দ্বিতীয় এবং চতুর্থ হয়েছে এখানকারই ছাত্রছাত্রী। সাফল্য প্রসঙ্গে এখানকার সাম্মানিক উপদেষ্টা শামীম সরকার বলেন, পরিশ্রম এবং সঠিক গাইডেন্সই যে সাফল্যের শেষ কথা, তা এই রেজাল্টে আবারও একবার প্রমাণিত হল ।
এদিকে জিডি স্টাডি সার্কেল থেকে গ্রুপ-‘এ’ এবং গ্রুপ- ‘বি’ মিলে মোট উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ জন। এর মধ্যে ডব্লিউবিসিএস এক্সিকিউটিভে উত্তীর্ণ তিন জন। এবং ডব্লিুউবিপিএস-এ সফল তিন জন।
আল-আমীন মিশন থেকে গ্রুপ-‘এ’ তে ২ জন এবং গ্রুপ- ‘বি’তে ২ জন মিলে মোট ৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই সফলতাই খুশি আল আমীন কর্তৃপক্ষ।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হজ কমিটি থেকে গ্রুপ-‘এ’ তে ২ জন এবং গ্রুপ- ‘বি’তে ২ জন মিলে মোট ৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
উল্লেখ্য, এবারের উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই একাধিক মিশন থেকে কোচিং নিয়েছেন এবং প্রার্থীদের তৈরি করতে উক্ত মিশন অথবা কোচিং সেন্টারগুলির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি করেছেন উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।