পুবের কলম প্রতিবেদক: রেলের তরফে দেওয়া ক্ষতিপূরণের চেক হাতে নিয়ে মালদার রতুয়া-২ ব্লকের পুখুরিয়া অঞ্চলের চৌদুয়ার গ্রামে পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শুক্রবার ট্রেনে চেপে মালদা স্টেশনে নামেন তিনি। সে সময়ে তার হাতে একটি স্মারকলিপি তুলে দেন রাজ্য কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচী। এরপরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হন রাজ্যপাল। তিনি বলেন, মালদার এতগুলো শ্রমিক মিজোরামে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। এটা অত্যন্ত বেদনার বিষয়। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন রাজ্যপাল।
তিনি বলেন, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার কুমার চৌবের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। মৃতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা, আহতদের দুই লক্ষ টাকা এবং স্বল্প আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে রেলের তরফে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে কাজের অভাবে বাসিন্দারা ভিনরাজ্যে ছুটছেন এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই সময় সমালোচনা করার সময় নয়। সবাইকে একজোট হয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। ইতিমধ্যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকেও মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সাংবাদিক সম্মেলন সেরে দুপুর একটায় বৃষ্টিস্নাত রাস্তা দিয়ে চৌদুয়ার গ্রামে এসে পৌঁছান রাজ্যপাল। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিবারদের সাথে কথা বলে তিনি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। পাশাপাশি রেলের তরফে দেওয়া একটি ১০ লক্ষ টাকার চেক এক মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রীর হাতে তুলে দেন। মৃতদের পরিবারের তরফে রাজ্যপালের কাছে আবেদন জানানো হয় পরিযায়ী শ্রমিকদের নিকট আত্মীয়দের যাতে ছোটখাটো সরকারি চাকুরির ব্যবস্থা করে প্রশাসন। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।
এদিকে মিজোরাম থেকে যে ১৮টি মৃতদেহ শুক্রবার দুপুর নাগাদ পৌঁছানোর কথা ছিল সেগুলি সন্ধ্যায় এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন সাবিরুল ইসলাম নামে এক গ্রামবাসী।
অন্যদিকে, সেনাউল নামে নিখোঁজ এক যুবকের মৃতদেহ এদিনই উদ্ধার হয়েছে। সেটিও পোস্টমর্টেম করার পরে মিজোরাম থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। চৌদুয়ার গ্রামে যে ১৪ জন শ্রমিক মারা গিয়েছেন তাদের সবাইকে একই কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। সেই জন্য গ্রামবাসীরা গণ কবর খুঁড়ে মৃতদেহগুলি ফেরার অপেক্ষা করছেন।
যদিও শুক্রবার সারাদিন ধরে বৃষ্টির দরুণ কবরের খনন কার্য কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। বৃষ্টির ফলে ত্রিপল খাটিয়ে কবরের খনন কার্য চলেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা ফিরোজ আলি আবির। তবে মৃতদেহগুলি না আসা পর্যন্ত কান্নার রোল শোনা যাচ্ছে গ্রামের আনাচে-কানাচে। মৃতদেহ গুলি পৌঁছালেই তাদের দ্রুত জানাজা সেরে কবরস্থ করা হবে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা।