পুবের কলম প্রতিবেদক: সংসারের জন্য একটু বাড়তি রোজগারের আশায় ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছিলেন। ফিরতে হচ্ছে কফিনবন্দি লাশ হয়ে। মালদার রাতুয়ার ২ নম্বর ব্লকের পুখুরিয়া চৌদুয়ার কোকলামারি, ইংরেজ বাজার ব্লকের সাত্ত গাজোলের আলিনগর, কালিয়াচক ২ ব্লকের পঞ্চানন্দপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের লস্করটোলায় এখন শোকের মাতম।
মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে নির্মীয়মাণ রেলসেতু ভেঙে বুধবার শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। বৃহস্পতিবার আইজলের জেলাশাসক নাজুক কুমার জানান, ‘এখনও পর্যন্ত যাঁদের দেহ উদ্ধার করা গিয়েছে, তাঁদের সবাই পশ্চিমবঙ্গের মালদহর বাসিন্দা। এখনও পর্যন্ত মোট ১৮ জনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি মালদায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘মৃতদেহগুলি রেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। জখম তিন জনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। তাঁরাও মালদার বাসিন্দা।’
মৃতের সংখ্যা কি আরও বাড়তে পারে, সেই প্রশ্নের জবাবে নাজুক বলেন, ‘যে ব্রিজটি তৈরি হচ্ছিল, সেটা দুর্গম জায়গায়। খাদ রয়েছে। ঝোপ রয়েছে। সেখানে আরও দেহ আটকে রয়েছে কি না, তা তল্লাশি চালিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এদিকে, মালদহের মৃত শ্রমিকদের দেহ রাজ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে মিজোরাম সরকার এবং উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের সঙ্গে সমন্বয় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার মিলনমেলার অনুষ্ঠান থেকে রেলের কাছেও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন মমতা। মালদহের জেলাশাসককে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, মৃতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। পাশাপাশি, নির্মীয়মাণ ওই সেতুর ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলার শ্রমিকদের যারা টাকার লোভ দেখিয়ে কাজ করাতে নিয়ে গিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মিজোরামে ব্রিজ ভেঙে মৃত শ্রমিকদের ১৪জনই রতুয়া-২ ব্লকের চৌদুয়ার এলাকার বাসিন্দা। এই পরিস্থিতিতে মৃতদের পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়াতে বৃহস্পতিবার তাঁদের বাড়িতে যান মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, মন্ত্রী তজমুল হোসেন ও পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মিজোরামের আইজল জেলার সাইরং থানা এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ রেল ব্রিজ ভেঙে মৃত্যু হয় মালদার ২৩ জন শ্রমিকের। তবে তাঁদের মধ্যে ১৮জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ৫জন নিখোঁজ থাকলেও তাঁদের মধ্যে ৪জনকে বুধবার রাতে তল্লাশি করে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে আইজল প্রশসন সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে আরও একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে প্রথম ধাপে ১৮ জন শ্রমিকের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়। তারপর এদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা নাগাদ অ্যাম্বুলেন্সে করে অসমের শিলচর থেকে আনা হচ্ছে ১৮জনের মৃতদেহ। আশা করা হচ্ছে, মৃতদেহগুলি শুক্রবার দুপুর নাগাদ মালদা এসে পৌঁছাবে। তারপর সেগুলিকে দাফন করা হবে। বাকি ৫ জনের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হলে তাদের দেহগুলি নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স মালদার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে।
পরিবারের অন্যতম উপার্জনকারীদের হারিয়ে এখন আতান্তরে তাঁদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। গ্রামে শোকের মাতম। স্বজন হারাদের হাহাকার, আর্তনাদ সর্বত্র। এদিন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন সাবিনা-তজমুল-সামিরুলরা। মৃতদের পরিবারের সাথে দেখা করে সমবেদনা জানিয়ে সামিরুল বলেন, ‘রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের নিকট আত্মীয়দের ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি ১ সেপ্টেম্বর থেকে যে দুয়ারে সরকার শিবির হবে সেই শিবিরে সরকারের ৬৪টি প্রকল্পের সুবিধা যাতে এই পরিবারগুলি পান তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়ার রুখতে পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড সারা রাজ্য জুড়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ করার কাজও শুরু করেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন রাজ্যে যাওয়া আটকাতে ছোট ছোট প্রকল্পে এইসব শ্রমিকদের যুক্ত করা হবে।’