নাজমুল সর্দার, দক্ষিণ দিনাজপুর:- মাত্র নয় মাস বয়সী এক নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুর শরীরে বাসা বেঁধেছে বিরল রোগ। যার চিকিৎসা ভারতে নেই বললেই প্রায় চলে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিদেশ থেকে আমদানি করা একটি ইনজেকশন দেওয়া গেলে হয়তো সুস্থ হয়ে যেতে পারে সপ্তর্ষি নামের শিশুটি।
আর এই ইনজেকশনের জন্য প্রয়োজন সাড়ে সতেরো কোটি টাকা। একটা সাধারণ পরিবারের পক্ষে যা জোগাড় করা কঠিন ব্যাপার। তাই এতো টাকা জোগাড় করতে হিমশিমও খাচ্ছে সপ্তর্ষির পরিবার। তবে এত তাড়াতাড়ি হাল ছাড়তে চাইছেন না সেনাকর্মীর পরিবারটি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী দিনে প্রশাসন ও বিধায়ক, সাংসদের কাছেও সাহায্যের আবেদন জানাবেন বলে সপ্তর্ষির পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে।
বালুরঘাট পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মঙ্গলপুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় সেনাকর্মী ধ্রুব মণ্ডল ও স্ত্রী সঙ্গীতার একমাত্র ছেলে সপ্তর্ষি মণ্ডল। জন্মের নয় মাস পরেও আর পাঁচটা শিশুর মত সুস্থ ও স্বাভাবিক নয় সপ্তর্ষি। এই বয়সে অন্য শিশুরা নিজে বসতে পারে, হামাগুড়ি দেয়, উপুড় হতে পারে। কিন্তু বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে সপ্তর্ষি এই সব কিছুই করতে পারে না। আর পাঁচটা বাচ্চার মত স্বাভাবিক নয় সপ্তর্ষি। বিষয়টি কয়েক মাস আগে নজরে আসে পরিবারে।
এরপর এপ্রিল মাসে বালুরঘাটের শিশু বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিয়ে শিশুর জিনগত সমীক্ষা করানো হয়। যেখানেই সামনে আসে স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি রোগের লক্ষণ। বিরল এই রোগের কথা শুনতেই আঁতকে ওঠেন পরিবারের লোকেরা। ঘটনা সঠিক কি না তা জানতে কলকাতা এবং দিল্লির এইমসে নিয়ে যাওয়া হয় সপ্তর্ষিকে। সেখানেও পরীক্ষা নিরীক্ষার পর একই রোগের কথা জানান চিকিৎসকরা।
শুধু তাই নয়, দু থেকে আড়াই বছরের মধ্যে এর সঠিক চিকিৎসা না হলে সপ্তর্ষিকে আর বাঁচানো সম্ভব হবে না বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রফি নামের এই মারণরোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই রোগের চিকিৎসার জন্য একটিমাত্র ইনজেকশন রয়েছে। যা আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। বিদেশ থেকে আনতে হয়। যার দাম প্রায় সাড়ে সতেরো কোটি টাকা। যা জানার পরেই কার্যত ভেঙে পড়েছেন অসহায় ওই শিশুর পরিবার। এবিষয়ে শিশুর মা সঙ্গীতা মণ্ডল বলেন, ‘বেশ কয়েক মাস থেকে লক্ষ্য করছিলাম ছেলের ভেতর ভেতর কোনও সমস্যা হচ্ছে। তা না হলে এই বয়সে অন্য শিশুরা একা একা অনেক কিছু করতে পারে৷ যা আমার ছেলে পারত না। ছেলের চিকিৎসার এই টাকা জোগাড় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সকলে একটু একটু করে এগিয়ে আসলে আমার ছেলের চিকিৎসা করাতে পারতাম। আমরা সামাজিক মাধ্যমেও সাহায্য প্রার্থনা করেছি।’