পুবের কলম প্রতিবেদক: ‘এক টানেতে যেমন তেমন, দুই টানেতে সুখী । তিন টানেতে রাজা-উজির, চার টানেতে ফকির।’ এ যেমন-তেমন টান নয়, একেবারে গাঁজার দম। আর এই গাঁজার নেশায় ডুবেছে যাদবপুরের একাংশ পড়ুয়া। তাদের নাকি রোজ এক ছিলিম গাঁজার টান না দিলে ‘মাথা’ তোলে না। নিষিদ্ধ এই মাদক সংগ্রহ করতে পকেট থেকে অনেকটাই ‘সাতে হয় তাদের। তাই এবার ক্যাম্পাসে গাঁজার চাষ শুরু করেছে হস্টেলের পড়ুয়ারা। যাতে ইচ্ছে মতো গাছ থেকে পেড়ে নিয়েই নেশা চালিয়ে যাওয়া যায়।
এদিকে যাদবপুরে মাদক সহ অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ করতে সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে মাদক সহ বহিরাগত ও প্রাক্তনীদের দমন কতটা সফল হবে সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তার মধ্যেই এবার যাদবপুরের মেইন হস্টেলে গাঁজার চাষের হদিশ মিলল।
হস্টেলে আড্ডা মানেই পড়ুয়াদের একাংশের মদের আসর। তার সঙ্গে যোগ হয় গাজা-ভাং। তবে গাঁজা কিনতে কিছু ‘খরচ’ হয়। ‘খরচ বাঁচাতে হস্টেলের কিছু আবাসিকের উদ্যোগে টবেই গাঁজার চাষ শুরু হয়েছে। এই নিয়ে এবার মেইন হস্টেল নতুন করে বিতর্কের মুখে।
পুলিশ ও হস্টেল সূত্রের ‘বর, ছাত্রাবাসের বারান্দায় টবেই চলত গাঁজার চাষ। যদিও বাংলা বিভাগের প্রথমবর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর পর সেই টবগুলি সরিয়ে দেওয়া হয়। তবু এক ছাত্রের মোবাইল থেকে মুছে ফেলা তথ্য উদ্ধার করতে গিয়েই মিলেছে টবে গাঁজা চাষের ছবি। সম্প্রতি ওই টব ও চাষ করা গাঁজার সন্ধানে পুরো হস্টেলজুড়ে তল্লাশি চালায় যাদবপুর থানার পুলিশ।
লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, ধৃত প্রাক্তনী ও সিনিয়ররা ‘জেইউএমএইচ’ নামে একটি গ্রুপ তৈরি করেছিল। তাতে বিভিন্ন ধরনের ছবি ও মেসেজের আদানপ্রদান হত। ওই নাবালক ছাত্রটি যাদবপুর মেন হস্টেলের তিনতলার বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে পড়ার পর ওই গ্রুপে নিজেদের মধ্যে বহু মেসেজ ও ছবির আদানপ্রদান হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যখন হইচই শুরু হয়, তখন ‘জিবি’ বৈঠক করে সিনিয়র ও প্রাক্তনীরা নির্দেশ দেয়, ওই হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে সব তথ্য ও মেসেজ মুছে দিতে। সঙ্গে গ্রুপটিও তুলে দিয়ে বলা হয়।
হস্টেলের বাসিন্দা এক ছাত্রের মোবাইল আটক করে তা ফরেনসিক পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে এই গ্রুপ ও তার যাবতীয় মেসেজ উদ্ধার করতে শুরু করে পুলিশ। ওই মেসেজ উদ্ধার করতে গিয়েই পুলিশের হাতে আসে কয়েকটি ছবি। তাতেই দেখা যায়, টবে হচ্ছে গাঁজা চাষ। কিন্তু নাবালক ছেলেটির মৃত্যুর পরই সৌরভ চৌধুরী, সত্যব্রত রায়ের মতো প্রাক্তনী ও সিনিয়ররা নির্দেশ দেয়, ওই টবগুলি সরিয়ে ফেলে গাঁজা গাছগুলি নষ্ট করে ফেলতে। তাই হস্টেলের বারান্দা, ছাদ-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও ওই গাঁজার গাছ বা টব উদ্ধার হয়নি। যদিও সেই গাছ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জেনেছে, হস্টেল সহ ক্যাম্পাসের ঝিলের ধারে গাঁজা পয়েন্টে বসেই তারা গাঁজা ও মদ্যপান করত। নেশা করার পর গভীর রাতে অশালীন আচরণ করতে শুরু করত তারা। তাদের আচরণে অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ পাশেই থাকা পুলিশ আবাসনের বাসিন্দারা।