পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং কাণ্ড নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। ঘটনায় এখনও ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার পুলিশের সন্দেহভাজনের তালিকায় থাকা এই কাণ্ডে অপরছাত্র অরিত্র ওরফে আলুর খোঁজ পাওয়া গেল। মঙ্গলবার ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টের মাধ্যমে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে গবেষণারত অরিত্র মজুমদার, ওরফে। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আমি অরিত্র মজুমদার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে গবেষণারত। সম্প্রতি যাদবপুর মেন হোস্টেলে একজন ছাত্রের অত্যন্ত মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় নানা মিডিয়ায় এবং সামাজিক মাধ্যমে আমার নামে বেশ কিছু অভিযোগ, প্রশ্ন ও মন্তব্য উঠে এসেছে। কলকাতার বাইরে, বলা ভালো, নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে থাকায় সেই কথাগুলো আমার কাছে এতদিন পৌঁছয়নি। পৌঁছলে আগেই উত্তর দিতাম। আমার অনুপস্থিতিতে সন্দেহ-অভিযোগগুলো অতিকায় আকার ধারণ করেছে। ফলে, কয়েকটা কথা লেখার প্রয়োজন হয়ে পড়ল। যে-মানসিক অবস্থায় আছি, তাতে কতখানি গুছিয়ে লিখতে পারব জানা নেই। সাধ্যমতো চেষ্টা করছি।’
সংবাদমাধ্যম এবং সমাজমাধ্যমে ওঠা অভিযোগগুলিকে দু’ভাগে ভাগ করে অরিত্রর বক্তব্য,
প্রথমত: ৯ আগস্ট গভীর রাতে যাদবপুর মেন হোস্টেলে যে মর্মান্তিক ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তিনি জড়িত কিনা, কেন পালালেন? দ্বিতীয়ত: যাদবপুর মেন হোস্টেলে ঘটনার সময় ‘আলু’ উপস্থিত ছিলেন কিনা?
প্রথম অভিযোগের জবাবে অরিত্র মজুমদার ওরফে ‘আলু’ লিখেছেন, ‘৯ আগস্ট রাতে আমি যাদবপুরের মেন হোস্টেলে ঢুকিইনি। বেশ কিছুকাল হস্টেলে যাননি। আমি সেই রাতে কেপিসি হাসপাতালেও গিয়ে উঠতে পারিনি। ফলে, গোটা অভিযোগটাই অবান্তর। আশা করি, তদন্ত করলে এই কথা সহজেই প্রমাণ হবে।’ দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে অরিত্র বলছেন ‘আমি নাকি এই ঘটনার পর থেকে পলাতক। এমনকি, কেউ কেউ লিখেছেন, লিখে চলেছেন, রাজ্যের শাসকদলের কোনও এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় আমি লুকিয়ে আছি। এই অভিযোগ অভাবনীয়। আমার ও আমার পরিবারের দিক থেকে দেখলে বীভৎসও বটে।’
পাশাপাশি অরিত্র লিখেছেন, ‘প্রশ্ন হল, আমি এতদিন কোথায় ছিলাম? ১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার, আমি রাজধানী এক্সপ্রেসে নয়া দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। সেখান থেকে পরের দিন শ্রীনগরগামী ফ্লাইট ধরি। আমাদের গন্তব্য ছিল কাশ্মীর গ্রেট লেকস। এই ট্রেকে আমার সঙ্গে আরও অনেকেই ছিলেন। এবং, যাঁরা এই ট্রেকিং রুটের ব্যাপারে অবহিত, তাঁরা জানেন, এখানে নেটওয়ার্কের বালাই নেই। প্রায় চারমাস আগেই (২২ ও ২৩ এপ্রিল) টিকিট কাটা হয়েছিল ট্রেন ও ফ্লাইটের। সেসবও নেওয়া হয়েছিল যাওয়ার আগে। এই সব নথিই আপনাদের সামনে থাকল। কোনওদিন ভাবিওনি, এভাবে ব্যক্তিগত নথি ও প্রমাণ দেখিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে। সে যাহোক। ১০ আগস্ট, ট্রেন ধরার আগে, সকালে আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। যাঁরা সেই রাতের ঘটনার পরেই আমার ফেরার হওয়া নিয়ে প্রচার করছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গে দেখাও হয়েছিল সেদিন। আমি ট্রেকে যাব, সে কথা আমার রিসার্চ গাইডকে আগেই জানিয়েছিলাম। তিনি সম্ভবত তা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েওছেন। কোনও এক ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার বাবাও একই কথা বলেছেন শুনলাম। আমার সতীর্থ ও বন্ধুরাও নানা জায়গায় এই কথা বলে থাকতে পারেন। কিন্তু, তারপরেও আমাকে নিয়ে ফেসবুকে ও মিডিয়ায় টানা পলাতক প্রচার চলেছে। আমার পরিচিত অনেকে এই কথা লিখে গেছেন । যেন তারা নিশ্চিত। একাধিক প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আমার নাম ও ডাকনাম (আলু) ধরে বিচারসভা বসানো হয়েছে। একাধিক সাংবাদিক ফেসবুকের ব্যক্তিগত পোস্টেও এই মত প্রচার করেছেন। সব মিলিয়ে, একটা ‘সত্য’ গড়ে-পিটে নেওয়া হয়েছে– আমি র্যাগিং ও ছাত্রমৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত। সেই রাতে প্রমাণ লোপাট করেছি এবং তারপর পালিয়ে গা ঢাকা দিয়েছি।’
ব়্যাগিং বন্ধ না করতে পারার দায় নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন ‘আলু’। লিখেছেন, ‘এই ঘটনায় বা সামগ্রিকভাবে র্যাগিং-এর সঙ্গে কোনওভাবে যুক্ত না থাকলেও মনে করি, আমার একজাতের ব্যর্থতা এখানে রয়েছে। ক্যাম্পাসকে র্যাগিং-মুক্ত রাখার নৈতিক ও রাজনৈতিক দায় আমারও ছিল। তা যে করতে পারিনি, সেটা স্পষ্ট। তাই, এই ঘটনার পরপরই সমষ্টিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এর দায় প্রকাশ্যে স্বীকার করে নেওয়া উচিত। আমি যে রাজনৈতিক চলাচলের অংশ, সেখান থেকে এই মর্মে বয়ান পরে ফেসবুকে পোস্টও করা হয়। সেই লিখিত বয়ানে আমার নাম যুক্ত করার অনুমতি আমি আগেই দিয়ে রেখেছিলাম। কারণ, ওই পোস্ট যখন যাচ্ছে, ততক্ষণে আমি নেটওয়ার্ক সীমার বাইরে চলে গেছি। ঐ পোস্টে ঘোষণাও করা হয়েছিল, ছাত্রছাত্রী সংসদের ‘সভাপতি’ পদ থেকে এতদ্বারা আমি পদত্যাগ করছি।’