বিশেষ প্রতিবেদন: উসমানীয় যুগের ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর অন্যতম শামসি পাশা মসজিদ। তুরস্কের ইস্তান্বুল শহরের ইসকুদার অঞ্চলে তা অবস্থিত। ১৫৮১ সালে বসফরাস প্রণালীর তীর ঘেঁষে নির্মিত হয় এ মসজিদ। উসমানীয় আমলের গভর্নর শামসি পাশার বিশেষ সহযোগিতায় মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদের নকশা তৈরি করেন বিখ্যাত উসমানীয় স্থপতি মিমার সিনান। ঐতিহাসিক এ মসজিদের বিশেষত্ব হল, এর ওপর পাখি বসে না। কারণ তা বসফরাস প্রণালী ও মারমারা সাগরের সংযোগস্থলে নির্মিত হয়েছে।
উসমানীয় সুলতান সুলাইমান কানুনির যুগে নির্মিত মসজিদটি ঘিরে নানা বিস্ময়কর কথা প্রচলিত রয়েছে। জানা যায়, উসমানীয় গভর্নর জেনারেল শামসি পাশা তৎকালীন স্থপতি মিমার সিনানের কাছে একটি অদ্ভুত আবদার করেন। তিনি তাঁকে এমন এক মসজিদ নির্মাণ করতে বলেন, যার ওপর পাখি দাঁড়াতে পারবে না। যেন মসজিদের ছাদে ময়লা না পড়ে। এরপর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন মিমার সিনান ইস্তান্বুলের তীরবর্তী ইসকুদার অঞ্চলটি নির্বাচন করেন।
এর কারণ হিসেবে মনে করা হয়, অঞ্চলটির প্রবাহমান বাতাস। স্বাভাবিকভাবে প্রচণ্ড বাতাসে পাখিদের চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে মসজিদের দেওয়াল ও মিনারের ওপর দাঁড়ানো পাখিদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাই মসজিদটির ছাদ নোংরা হয় না এবং এর গম্বুজ ও মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। মসজিদের আরেক বিশেষত্ব হল, এর ভেতর বায়ু চলাচলের জন্য বিশেষ ধরনের আউটলেট রয়েছে। তুরস্কে এ ধরনের ব্যবস্থা একমাত্র এ মসজিদেই রয়েছে।
এর মাধ্যমে মসজিদে সমুদ্র থেকে পানি প্রবেশ করে এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ছাড়াই তাতে প্রাকৃতিক বায়ু চলাচল করে। মসজিদের বাম পাশে উসমানীয় সেনাপতি শামসি আহমেদ পাশার সমাধি রয়েছে। তা ছাড়া মসজিদের ভেতরে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। বর্তমানে তা সরকারি গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উসমানীয় যুগে এখানে ইসলামি শিক্ষা প্রদান করা হতো। প্রতিদিন পর্যটকরা মসজিদটির স্থাপত্য সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হন। উল্লেখ্য, বিখ্যাত উসমানীয় স্থপতি মিমার সিনান মোট ৩৬০টিরও বেশি অবকাঠামো-স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ৮৪টি বড় মসজিদ, ৫১টি ছোট মসজিদ, ৫৭টি মাদ্রাসা, ৩৫টি প্রাসাদ, ৪২টি হাম্মাম, ২২টি সমাধি, ১৭টি সরাইখানা, ৭টি জলাশয়সহ আরও অনেককিছু।