আহমদ হাসান: খ্যাতিসম্পন্ন শিক্ষাঙ্গণে আর একটি মৃত্যু। শুধু মৃত্যু নয়, নির্মম মৃত্যু। পাঠক ঠিকই ধরেছেন। বলছি স্বপ্নদীপ সম্পর্কে। বড় আশা করে সে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়তে এসেছিল। নিয়ে এসেছিল একরাশ স্বপ্ন। শুধু নিজের নয়, স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে নদিয়ার প্রত্যন্ত এলাকা বগুলার বহু অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্নেরও মৃত্যু হল। স্বপ্নদীপের বাবা-মায়ের কথা না বলাই ভালো। অনুমান করা যায়, তাঁরা সন্তানের এভাবে অকাল ও অকারণ মৃত্যুতে কতটা আঘাত পেয়েছেন।
কিন্তু প্রশ্ন করতেই হবে, কেন নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে সহপাঠীদের হাতে অথবা অধ্যাপকদের রহস্যময় প্ররোচণা কিংবা গাফিলতিতে প্রাণ যাচ্ছে মেধাবি পড়ুয়াদের? তাদের করুণ মৃত্যু হচ্ছে ক্যাম্পাসের মধ্যেই। আশ্চর্যের বিষয়, কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনও কিন্তু সাথ দিচ্ছে খুনিদের। কেন? সে কথাও প্রকৃতই রহস্যে ঘেরা। হত্যার মামলাগুলি প্রায়ই ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। যেমন, স্বপ্নদীপের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সে নাকি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েছিল! বিবস্ত্র অবস্থায় হস্টেলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল! কিন্তু কেন, তাকে যে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছিল, সেটাই কি তাকে অপ্রকৃতিস্থ করে তুলেছিল, নাকি দাদাভাইরা তার উপর ড্রাগ জাতীয় কোনও দ্রব্য প্রয়োগ করেছিল! কেন প্রাক্তনীরা হস্টেলের সিট দখল করে থাকবেন, তার কোনও ব্যাখ্যা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। হস্টেলের সুপার ও অন্য স্টাফরাও তাঁদের দায় থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেন না।
কয়েক বছর থেকে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলিত, সংখ্যালঘু কিংবা দূর প্রবাসী পড়ুয়ারা আত্মহত্যা করছেন অথবা রহস্যময়ভাবে মারা যাচ্ছেন। মুম্বই, খড়গপুর আইআইটি, দিল্লির এইমস প্রভৃতি উচ্চমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায়ই ‘আত্মহত্যা’ কিংবা খুনের ঘটনা ঘটছে। হারিয়ে যাচ্ছে দেশের বহু প্রতিভা। খড়গপুর আইআইটিতে ফায়জানের হত্যাও একইদিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে। ফায়জান ছিল উজনি অসমের একটি গ্রামের গরিব দম্পতির একমাত্র সন্তান। সে ছিল খুবই প্রতিভাশালী। খড়গপুর আইআইটিতে ভর্তি হওয়ার আগে বহু পুরস্কার পেয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর বা খুনের ঘটনা প্রতিটি মুহূর্তই বলে দিচ্ছে, কে বা কারা তাকে পরিকল্পনা মাফিক খুন করেছে। দ্বিতীয়বার ফরেন্সিক রিপোর্টেও সেই তথ্য উঠে এসেছে। একটি মহল বলছে, তার গবেষণা চুরি করে নিয়ে নেওয়ার জন্যই তাকে হত্যা করা হয়েছে। আশ্চর্যের কথা, খড়গপুর পুলিশ মৃত ফায়জানের মাকে বিন্দুমাত্র সমবেদনা না জানিয়ে ‘এই ঘটনায় একটি পার্টি’ হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্বপ্নদীপ, ফায়জানরা কি এভাবেই পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে? তাদের মৃত্যুর দায়ভার কে নেবে? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? পুলিশ? সহপাঠী কিংবা অধ্যাপকরা? নাকি আমাদের এই অবক্ষয়গ্রস্ত সমাজ?