দেবশ্রী মজুমদার, রামপুরহাট: করোনাকালে জরুরি ভিত্তিতে বহু ট্রেন বাতিল হয়ে যায়। অনেক ট্রেনের স্টপেজ উঠে যায়। সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। বিশেষ পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে স্থানীয় বাসিন্দারা সেসব অসুবিধা মুখ বুজে মেনে নিয়েছেন। কয়েক বছর বাদে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেশজুড়ে করোনাজনিত বাধা নিষেধ উঠে যায়। রেল যাত্রাতেও তার প্রভাব পড়ে। লোকাল ট্রেনগুলি ফের তাদের নির্ধারিত সময়সূচী মেনে যাত্রা শুরু করে এবং অবশ্যই এক্সপ্রেসের ভাড়া বাদ দিয়ে লোকাল বা প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ভাড়ায়। কিন্তু রেলের সাহেবগঞ্জ-লুপ লাইন যেন দুয়োরানী।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এই লাইনের যাত্রীদের পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনওরকম পরিবর্তন হয়নি। রেলের তরফে বাতিল লোকাল ট্রেনগুলি (ইএমইউ বা ডিএমইউ) আজও চলাচল করতে শুরু করেনি।
বিশেষ করে সাহেবগঞ্জ লুপলাইনে বীরভূম জেলার রামপুরহাট-সাহেবগঞ্জ রুটে রেল পরিষেবা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। করোনাকালে বাতিল লোকাল কোনও ট্রেন ফের চালানো শুরু করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্পেশাল ট্রেনের তকমা দিয়ে যে দুয়েকটি লোকাল ট্রেন এক্সপ্রেসের ভাড়ায় চালানো হচ্ছিল সেগুলিরও ভাড়া কমানো হয়নি বা কমানোর কোনওরকম উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট এলাকার যাত্রী সাধারণের মধ্যে ক্ষোভ চরমে পৌঁছেছে। আর রেল পরিষেবার এই অব্যবস্থার অবসানের লক্ষ্যে রেল অবরোধকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হলেন সাধারণ মানুষ।
রবিবার ষোল দফা দাবিতে মুরারই রেলওয়ে স্টেশনে নাগরিক মঞ্চের ব্যানারে রেলওয়ে নিত্যযাত্রী সহ স্থানীয় মানুষজন চার ঘন্টা রেল অবরোধ করেন। ঘটনায় বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকে পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে, ভোগান্তি হয় সাধারণ যাত্রীদের।
জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল থেকে রেল অবরোধের জেরে মুরারইয়ে বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ স্পেশাল ট্রেন এবং নলহাটি স্টেশনে বন্দে-ভারত সহ বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন দীর্ঘক্ষণ আটকে পড়ে।
উল্লেখ্য, মুরারই বীরভূম জেলার একটি প্রান্তিক স্টেশন। এই স্টেশনের সঙ্গে ঝাড়খণ্ড, মুর্শিদাবাদসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ আছে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এই এলাকার মানুষের প্রতি অবিচার করে চলেছে রেলওয়ে দফতর। তাঁরা দাবি করেন, এই সাহেবগঞ্জ-লুপ লাইনের স্টেশন মুরারইয়ের প্রতি রেলের দীর্ঘমেয়াদি বঞ্চনা আছে। বিশেষ করে করোনার পর, ছয় জোড়া ট্রেন তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলি আর চালু হয়নি। তাঁদের দাবি, সেগুলো ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি, এক ঘন্টা অন্তর ইএমইউ ট্রেন পরিষেবা চালু করতে হবে। না হলে লাগাতার এই আন্দোলন চলতে থাকবে।
রবিবার সকাল থেকে দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই রেল অবরোধে শামিল হন। ছয় জোড়া বাতিল অথবা স্টপেজ তুলে নেওয়া ট্রেন পুনরায় চালু করা ছাড়াও আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, এক ঘন্টা অন্তর আপ ও ডাউনে মেমু ট্রেন চালু করতে হবে।
জামালপুর সুপার, তেভাগা, কুলিক, কাঞ্চনকন্যা, উত্তরবঙ্গ, গয়া এক্সপ্রেস এবং যোগবানী এক্সপ্রেসের স্টপেজ দিতে হবে। আপ ট্রেনকে এক নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড় করানোর বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। টাইম টেবিল অনুসারে ট্রেন চলাতে হবে। আপ এবং ডাউন ট্রেনের মধ্যে গ্যাপ ৬ ঘন্টা থেকে কমিয়ে এক ঘন্টা করতে হবে। বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনটিকে পাকুড় স্টেশন পর্যন্ত এক্সটেনশন করতে হবে। লোকাল ট্রেনে এক্সপ্রেস-এর ভাড়া নেওয়া চলবে না।
বীরভূমের সদর শহর সিউড়িতে অবস্থিত অফিসগুলিতে ও জেলা আদালতে সঠিক সময়ে পৌঁছানো এবং কাজ শেষে ফেরার জন্য লোকাল ট্রেন অবশ্যই দিতে হবে। মুরারই স্টেশনে প্ল্যাটফরমের কোচ-পজিশন বোর্ড লাগাতে হবে। স্টেশন চত্বরে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বর্ধমান-মালদা টাউন, বর্ধমান-সাহেবগঞ্জ ও আসানসোল-বারহারওয়া স্টেশনের মধ্যে যোগাযোগ সুগম করতে হবে।