পারিজাত মোল্লাঃ বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আরও একটি নির্দেশে অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারী করলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট।শিক্ষাক্ষেত্রে ‘পোস্টিং’ দুর্নীতি হয়েছে বলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন । এমনকী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকে বলেন, -‘ প্রয়োজনে তারাও এফআইআর করে তদন্ত করতে পারে’। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট । গত জুলাই মাসে এক মামলার শুনানিতে উঠে আসে এই পোস্টিং দুর্নীতির প্রসঙ্গ। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যই এই দুর্নীতির পিছনে ছিলেন বলেও অভিযোগ করা হয়। গত ২৫ জুলাই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে বিচারপতি বলেছিলেন, -‘ এটা গুরুতর অভিযোগ। আগের দুর্নীতির সঙ্গে এই দুর্নীতি এক নয়। এই ঘটনার আলাদা তদন্ত হওয়ার প্রয়োজন’।এরপরই বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়, এই মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেন। হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ জানায়, -‘ এখানে বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। দালালের মাধ্যমে চাকরি বিক্রি করেছেন মানিক ভট্টাচার্য। ছক কষেই এই দুর্নীতি করা হয়েছে’।শুধু সিবিআই নয়, এই মামলায় একযোগে ইডিকেও তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, -‘ এই মামলায় কোনও আর্থিক তছরুপ হয়ে থাকলে তদন্ত করতে পারবে ইডি। প্রয়োজনে হেফাজতে নিতে পারবে তারা’।হাইকোর্টের নির্দেশের পরই ২৫ তারিখ রাতে ও ২৬ তারিখ সকালে প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে মানিককে দু দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। এমনকী গত বুধবার ইডিও এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে।কীভাবে এই দুর্নীতি হয়েছিল সেটাও শুনানিতে উঠে এসেছিল। আদালত সুত্রে প্রকাশ, -‘গত ২০২১ সালের ৬ জুলাই পর্ষদ এটা তালিকা বের করে। সেখানে দেখা যায়, শিক্ষকদের নিজেদের জেলায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরফলে বাধ্য হয়ে দূরের জেলায় চাকরি গ্রহণ করেন বহু শিক্ষক।ওইবছর ৩০ জুলাই ফের শূন্যপদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাতে দেখা যায় সবারই নিজের জেলায় শূন্যপদ আছে। মাত্র ২৩ দিনে কী করে তৈরি হল এই শূন্যপদ? ‘ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পছন্দের জেলায় টাকার বিনিময়ে চাকরি দিতেই এই কারচুপি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।বিচারপতির ইডি-সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন জেলবন্দি মানিক ভট্টাচার্য। এদিন সুপ্রিম কোর্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেয়। সেই নির্দেশ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারকে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে ।বৃহস্পতিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেও এই পোস্টিং দুর্নীতি মামলার শুনানি ছিল। কিন্তু শুনানি শুরু হওয়ার আগেই বিচারপতির কাছে এসে পৌঁছয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। এদিন এজলাসে সেই কথা উল্লেখ করে বিচারপতি বলেন, -‘অন্তত আগামী এক সপ্তাহ তিনি এই মামলা শুনবেন না’। এক সপ্তাহ পরে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।