পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: নির্দেশ এসেছিল, উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যেতে হবে। পাথর নিক্ষেপ থেকে গাড়ি-পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্দুক, তলোয়ার, লোহার রড, লাঠি নিয়ে চলছে হিংস্রতা। ভয়ে আতঙ্কে মানুষ দৌড়াদৌড়ি করছে। ফোন পেয়েই এক মুহূর্ত দেরি করেননি হোমগার্ড নীরজ। ছুটে গিয়েছিলেন হরিয়ানার গুরুগ্রামের নুহতে। একটি ধর্মীয় মিছিল যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেবে তা ঘুণাক্ষরে আঁচ করতে পারেননি কেউই। লাঠি, রডের মার এসে পড়ে নীরজের ওপরে। রক্তাক্ত হন তাঁর সহকর্মীরাও। দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই চালিয়ে গেছেন সকলেই। আর ফিরে আসবেন না হোমগার্ড নীরজ খান। নিরাপত্তা দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছরের চাকরি জীবনের ইতি হয়ে গেছে।
সোমবার সন্ধ্যার সময় থেকেই রণক্ষেত্রের রূপ নেয় নুহ। সহকর্মীদের সঙ্গে সেখানেই দৌড়ে গিয়েছিলেন নীরজ। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে সোমবার শেষ ডিউটি করে গেলেন তিনি। মানুষের হিংস্রতা কেড়ে নিয়েছে ৬ জনের প্রাণ। এর মধ্যে একজন মসজিদের ইমাম, তিনজন সাধারণ মানুষ ও দুজন হোম গার্ড। এদের মধ্যেই একজন নীরজ। এক লহমায় নাম শুনলে নীরজকে হিন্দু বলে মনে হলেও আদতে তিনি ছিলেন এক মুসলিম পরিবারের ছেলে। ঘটনাস্থলে যখন নীরজ গিয়েছিলেন, তাঁর পরিবার এক মুহূর্তের জন্য ভাবেনি এইদিনই শেষ উর্দি পরেছে তাদের বাড়ির ছেলে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন নীরজ। হোম গার্ডের চাকরিতে হরিয়ানার খেরকি দৌলা থানায় যোগ দেন। দীর্ঘ ১৫ বছরের চাকরি জীবনে শৃঙ্খলা, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। বাড়ি ওয়াজিদপুর গ্রামে।
সোমবার ঘটনাস্থল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই সোমবার সন্ধ্যায় মারা যান তিনি। স্বামীকে হারিয়ে দুই শিশু নীতিন (১০) ও নিকিতা (৬)কে নিয়ে শোকস্তব্ধ নীরজের স্ত্রী ভাকিলা। নীরজের বড় ভাই সোনু খান জানিয়েছেন, খুব মজার মানুষ ছিল তাঁর ছোটভাই নীরজ। সোমবার সকালেও কাজে যাওয়ার আগে আমরা দুই ভাই ফিটনেস আর ওয়ার্কআউট নিয়ে কথা বলছিলাম। তখনও মজা করে বলেছিল, আমাকে শরীরের ওজন কমাতে হবে। সোনু আরও জানান, হিন্দু নামই রয়েছে আমাদের পরিবারের সদস্যদের, মহিলাদের মুসলিম নাম। হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে থাকি, খুব কমই মুসলিম পরিবার রয়েছে। কোনও সমস্যা নেই, সকলেই একসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করে। উভয়পক্ষের মধ্যেই ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক, সম্প্রীতি বজায় রয়েছে বহুকাল থেকেই। তখন সেই সুন্দর সম্পর্কের জন্যই মুসলিম পরিবারগুলি তাদের সন্তানদের হিন্দু নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই রীতিই চলে আসছে। নুহের ঘটনায় আমারা ভাই চলে গেছে। কিন্তু আমরা এখানে আমাদের মধ্যে সম্প্রীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নীরজের বাবা জানিয়েছেন, ‘আমি কার্গিলে যুদ্ধ করেছি। আমার ছেলে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে শহিদ হয়েছে। আমি গর্বিত।’
এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নিহত হোম গার্ড নীরজ ও গুরুসেভ-এর পরিবারকে ৫৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে হরিয়ানা পুলিশ।