পুবের কলম প্রতিবেদকঃ দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিনের জন্মের ২৯৩ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু শিক্ষা ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর উৎসর্গকৃত সম্পত্তির সুফল আমরা আজও পেয়ে চলেছি। এ কথাগুলি উঠে এলো বিত্ত নিগমের অনুষ্ঠানে।
‘আমরা নিজেদের সংখ্যালঘু বলি। কিন্তু ‘সংখ্যালঘু’ হয়ে থাকলে চলবে না, মাইনর থেকে মেজর হতে হলে কিন্তু সংখ্যাটাই সব নয়। বড় হতে হলে প্রয়োজন শিক্ষা ও কর্মদক্ষতায় এগিয়ে যাওয়া। সংখ্যালঘুরা এভাবেই মাইনর থেকে মেজর হতে পারে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি সেই লক্ষ্যে এগোচ্ছি। ১ আগস্ট হাজী মুহাম্মদ মহসিন ফান্ডের স্কলারশিপ বিতরণে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তাতে এমনটাই বললেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
এ দিন ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন এনডাওমেন্ট ফান্ড’ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ১০৬ জন কৃতী পড়ুয়াদের হাতে স্কলারশিপ তুলে দেন মন্ত্রী ও আমলারা। মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিকের প্রথম দশে থাকা ৭৬ জন পড়ুয়া, উচ্চমাধ্যমিকের ২০ ও আলিমের ১০ জন ছাত্রছাত্রীর হাতে ২০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।
বিত্ত নিগমের অডিটোরিয়াম থেকে মালদার ৪১ জন, মুর্শিদাবাদের ১৭ ও পূর্ব বর্ধমানের ১৩ জন ছাত্রছাত্রী ছাড়াও অন্যান্য জেলার ছাত্রছাত্রীদের ২১ লক্ষ টাকার স্কলারশিপ প্রদান করে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। এই স্কলারশিপ তুলে দেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
এ ছাড়া ছিলেন মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি, তাজমুল হোসেন, সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, হজ কমিটির চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, রাজ্যসভায় নয়া নির্বাচিত সাংসদ সামিরুল ইসলাম। স্বাগত ভাষণ দেন বিত্ত নিগমের চেয়ারম্যান পি বি সালিম, সংখ্যালঘু দফতরের সচিব গুলাম আলি আনসারি, বিত্ত নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম বিশ্বাস। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিত্ত নিগমের অন্যতম জেনারেল ম্যানেজার তানিয়া পারভিন।
সংখ্যালঘু দফতরের কাজের প্রশংসা করে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, আমরা একজন মানবিক মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়েছি। যিনি চাইছেন পিছিয়েপড়া সংখ্যালঘুরা এগিয়ে যাক। সংখ্যালঘুদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ১২ বছরে সংখ্যালঘু বাজেট বরাদ্দ চারশো কোটি থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকায় উন্নত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি পড়ুয়াকে স্কলারশিপ ও ঋণ দেওয়া হয়েছে। পিছিয়েপড়া বলে বসে থাকলে হবে না, এগিয়ে যেতে হবে।
বক্তব্যের শুরুতেই রাজ্য হজ কমিটির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান এবং রাজ্যসভার সাংসদ সামিরুল ইসলামকে শুভেচ্ছা জানান সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান।
তিনি বলেন, হাজী মুহাম্মদ মহসিনকে আমরা ‘দানবীর’ হিসেবে জানি। তিনি শিক্ষাবিদও ছিলেন। হাজী মুহাম্মদ মহসিন ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ আধ্যাত্মিক মানুষ। তাঁর নামে এবং তাঁর অর্থ ব্যয়ে যে কলেজ (হুগলি মহসিন কলেজ) প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেখানে সব ধর্মের পড়ুয়ারা ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু কম-বেশি একই সময়ে তৈরি হিন্দু স্কুল ও কলেজ এবং সংস্কৃত কলেজে অন্য ধর্মের পড়ুয়ারা ঠাঁই পেত না। আলিয়া মাদ্রাসায় ছিল একই পরিস্থিতি।
যদিও আলিয়াতে অন্য ধর্মের প্রবেশে কোনও বাধা ছিল না। হুগলি মাদ্রাসা এবং হুগলি মহসিন কলেজ থেকে খ্যাতনামা ব্যক্তিরা তৈরি হয়েছেন। হাজী মহসিনের অর্থে অবিভক্ত বাংলা যে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছিল, তার ফল আমরা পাচ্ছি। তাঁর ভাবনা ব্যর্থ হয়নি।
আহমদ হাসান ইমরান আরও বলেন, মালদার কালিয়াচকে একশোর বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ বছর মাদ্রাসা বোর্ডের প্রথম ১০ জনের মধ্যে ৪ জনই টার্গেট পয়েন্ট স্কুলের। মালদার অখ্যাত গ্রাম থেকে ছেলে-মেয়েরা প্রথম হচ্ছে। আজ গ্রামে গ্রামে শিক্ষা ছড়িয়ে পড়ছে। আমি মনে করি মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণাই বাংলায় সংখ্যালঘুদের মধ্যে এক শিক্ষা বিপ্লব শুরু হয়েছে। দিনাজপুরের দিনমজুরের সন্তান আবু সামা উচ্চমাধ্যমিকে ১ নম্বরের জন্য দ্বিতীয় হয়েছে। বীরভূমের এক অখ্যাত গ্রামের স্কুল থেকে রেজাউদ্দীন সারা ভারতের লক্ষ লক্ষ পড়ুয়ার মধ্যে ১৩৪তম স্থান হাসিল করেছে।
শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরি বলেন, শিক্ষার আহ´ান দিয়ে আল-কুরআন ও ইসলাম ধর্মের শুরু। শিক্ষা বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ হতে পারে না। ‘মুসলিমরা পিছিয়ে পড়া’ আজ থেকে এই শধ বাদ দিতে হবে। কারণ, মুসলিমরা আর পিছিয়ে নেই। আমাদের শপথ নিতে হবে আরও এগিয়ে যাওয়ার।
প্রসঙ্গত, ‘মানুষ মানুষের জন্য’ শুধু কথার কথা নয়, হাজী মুহাম্মদ মহসিন তাঁর সারা জীবন ধরে বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণ করেছেন। সকলের জন্য কেবল শিক্ষার কথাই তিনি ভাবেননি, চিকিৎসা ও দারিদ্র্যমোচনের কাজেও তিনি উৎসর্গ করেছিলেন তাঁর সম্পদ। যা আজকে ‘হাজী মুহাম্মদ মহসিন এনডাউমেন্ট ফান্ড’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর তাঁর জন্মদিনে এনডাউমেন্ট ফান্ড থেকে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।