পারিজাত মোল্লা: সুপ্রিম কোর্ট থেকে কলকাতা হাইকোর্ট, প্রতিটি ক্ষেত্রেই রামনবমী মামলায় ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। এবার হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে মুখ পুড়লো রাজ্যের। রামনবমীর অশান্তি নিয়ে এনআইএ-এর করা মামলায় রাজ্যের আচরণে বিরক্ত কলকাতা হাইকোর্ট। ‘রায় বিপক্ষে গেলেই পাল্টা মামলা! রাজ্য সরকার লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করছে সুপ্রিম কোর্টে।’ রামনবমীর অশান্তি মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ভর্ত্সনার মুখে পড়ল রাজ্য।
সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি মামলার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য।পরে সুপ্রিম কোর্টেও যায় রাজ্য।রামনবমী মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পর হাইকোর্টেও ধাক্কা রাজ্যের।
গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের এনআইএ বিরোধিতা সংক্রান্ত আবেদন খারিজ করার পরেও কয়েকদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে ফের একই আবেদন নিয়ে মামলা দায়ের করে রাজ্য।
এই মামলা ফিরিয়ে দেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। ইতিমধ্যে রামনবমী মামলায় রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে আর্জি জানায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।
সেই প্রেক্ষিতে আদালত এদিন জানায়, -‘ আপনারা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চ্যালেঞ্জ করছেন। তারপর সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তাতে কোনও ভাবেই ঢুকবে না আদালত।
ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল যাবতীয় মামলার নথি এনআইএকে দিতে হবে। আগে সেই নির্দেশ কার্যকর করুক রাজ্য, তার পরে আপনাদের মামলা শোনা হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এড়িয়ে নতুন মামলা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের নির্দেশ কার্যকর করতে দেরি করবে রাজ্য, সেটা মানব না। আপনারা টাকা খরচ করে সুপ্রিম কোর্ট যাবেন, সেখানেও নিজেদের পক্ষে রায় না পেলে সেখানকার নির্দেশ পালন করবেন না। এটা হতে পারে না।
আগে এনআইএ মামলা করেছে, তাদের মামলা আগে শুনব, তারপরে রাজ্যের। কারণ রাজ্য কোর্টের নির্দেশ পালন না করে নতুন মামলা করে বিষয়টা আরও ঘোরালো করছে’।
ঠিক এভাবেই এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।
উল্লেখ্য, রামনবমীর দিন হাওড়া ও হুগলিতে শোভাযাত্রা বের করা নিয়ে ব্যাপক গন্ডোগোল হয়। দুই জায়গাতেই হিংসার ঘটনা ঘটে। বহু মানুষ আহত হন। হামলা চালানো হয় স্থানীয় ঘরবাড়িতেও। ওই ঘটনায় এনআইএ তদন্তে চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর জনস্বার্থ মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের আর্জির বিরোধিতা করে আদালতে যায় রাজ্য। হাইকোর্ট রাজ্যের আর্জি খারিজ করে দেয়।
এর পর সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট এফআইআর, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সংগ্রহ করা নথিপত্র, ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ফুটেজ ইত্যাদি এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। রাজ্যের একাধিক মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এই বিষয়টি নজর এড়ায়নি কলকাতা হাইকোর্টের।
বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের বেঞ্চের রাম নবমীর মামলার শুনানি চলে।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের তরফে গত সপ্তাহে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, রামনবমীতে অশান্তির ঘটনায় তদন্তভার থাকবে এনআইএ-এর হাতে। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল থাকে। তাতে স্বাভাবিকভাবেই অখুশি হয় রাজ্য সরকার। দ্বিতীয়ত সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলে দেয়, -‘ তদন্তের ক্ষেত্রে সমস্ত নথি রাজ্য পুলিশকে এনআইএ -এর হাতে তুলে দিতে হবে। কিন্তু এনআইএ এর অভিযোগ, -‘ রাজ্যের তরফে কোনও নথিই তাঁরা হাতে পাননি’। এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এনআইএ তদন্তকারীরা।
এদিকে, আবার কয়েক দিন আগে রামনবমীর অশান্তির ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এনআইএ তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে মামলা চেয়ে অনুমতি চায়। কিন্তু সেই আর্জিতে কোথাও উল্লেখ ছিল না যে সুপ্রিম কোর্টে ইতিমধ্যেই এনআইএ এর হাতে তদন্তভার রাখার নির্দেশ দিয়েছে, নথি জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।
কেন্দ্রের আইনজীবী এদিন বিচারপতি জয় সেনগুপ্তর এজলাসে সওয়াল করে জানান, -‘ ইতিমধ্যেই বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে এই সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি হয়েছে। কিন্তু যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছে, এটি তাঁর এক্তিয়ার বহির্ভূত বলে মামলা ছেড়ে দেন’। বিষয়টি জানার পরই বিরক্ত হন বিচারপতি সেনগুপ্ত। এরপর বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ”আপনারা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে একটা নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছেন। তার পর শীর্ষ আদালতের নির্দেশ পক্ষে না গেলে নতুন মামলা করছেন। এটা হতে পারে না।”