দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: উপাচার্যের বাড়ির তালা ভাঙল বীরভূম জেলা পুলিশ। কলকাতা হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী রায়ের পর শুক্রবার বিকেল চারটে নাগাদ বোলপুর মহকুমা শাসক, বোলপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সহ বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয় শান্তিনিকেতনের পূর্বিতায়। সেখানে উপাচার্যের গেটের বাইরে থাকা তালা ভেঙে ফেলা হয়।
বিশ্বভারতীতে ছাত্রের বিক্ষোভের জেরে কলকাতা হাইকোর্টে বুধবার রিট পিটিশন দাখিল করে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই মামলার শুনানিতে শুক্রবার অন্তর্বর্তী রায় দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
সেই নির্দেশ মেনে এদিন বিশ্বভারতীতে যে সমস্ত গেটে তালা মারা ছিল তা ভেঙে ফেলা হয় এবং সাধারণের চলাচলের রাস্তা ফাঁকা করা হয়। সেই সঙ্গে উপাচার্যের বাড়ির পাশে যে সিসিক্যামেরা ধরে রেখেছিল বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রী, তাও এদিন বাধা মুক্ত করা হয়।
এদিকে আদালতের অন্তর্বর্তী রায় ঘোষণা হওয়ার পরেই বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা তাদের অবস্থান মঞ্চ উপাচার্যের বাড়ির সামনে থেকে খুলে ফেলেন। অবস্থান মঞ্চ খুলে ফেললেও আন্দোলন চলবে তা এদিন স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেন আন্দোলনরত পড়ুয়ারা।
তারা জানান ছাত্র আন্দোলন বন্ধ হচ্ছে না, কারণ কলকাতা হাইকোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশে কোথাও ছাত্র আন্দোলন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
গত শুক্রবার থেকে তিন পড়ুয়ার বহিষ্কারের প্রতিবাদ করে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্রছাত্রীরা। তাকে সমর্থন জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। প্রবীণ অশ্রমিক, প্রাক্তনী, ব্যবসায়ী সমিতি, পৌষ মেলা বাঁচাও কমিটি সহ বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই তাদের সমর্থন জানিয়ে গেছে।
বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফা সভাপতি, সাসপেন্ডেড অধ্যাপক, সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা এখনও হাতে রায়ের কপি পাইনি। তবে আমাদের আইনজীবীর তরফ থেকে যা জানতে পেরেছি তাতে কোথাও ছাত্রদের আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে উপাচার্যের বাড়ি থেকে ৫০মিটার দূরে অবস্থান মঞ্চ হতে হবে এবং সেখানে কোনও মাইকের ব্যবহার করা যাবে না। সেটা অবশ্যই মেনে নেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “আদালতের রায়ে বলা হয়েছে যে সমস্ত তালা খুলে ফেলতে হবে। আমরা তো কোন তালা মারিনি। যা মারা হয়েছে সব উপাচার্যের নির্দেশে বিশ্বভারতীর কর্মীরাই তালা মেরেছেন। সেটা আদালতে আমরা প্রমাণ সহ দাখিল করেছি।”
আদালতের অন্তর্বর্তী রায়ে এটাও বলা হয়েছে যে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তার সম্পত্তি হানি এবং নিরাপত্তাহীনতার যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার জন্য শান্তিনিকেতন থানার পক্ষ থেকে তিনজন পুলিশ উপাচার্যের বাড়ির ওখানে নিযুক্ত করতে হবে। এবং সমস্ত তালা ভেঙে ফেলতে হবে, সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্যে রাস্তা খুলে ফেলতে হবে।
জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী জানান, “আদালতের নির্দেশ মতো ইতিমধ্যেই কাজ করা শুরু হয়েছে।”
বিশ্বভারতীর বহিষ্কৃত ছাত্র সোমনাথ সৌ বলেন, “বিশ্বভারতীর ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে হাইকোর্টের অন্তর্বতীকালীন রায়ে শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনকে বন্ধ করার জন্য কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। বরং উপাচার্যকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনও প্ররোচনা মূলক বক্তব্য থেকে দূরে থাকতে। উপাচার্যের বাসভবন থেকে ৫০ মিটার দূরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চালাতে কোনও বাধা নেই। আমরা সেটাই করব।প্রতিটি পদক্ষেপই আমরা আমাদের আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরেই নেব।”