পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: মণিপুরে দুই কুকি মহিলাকে গণধর্ষণ ও তারপর নগ্ন করে প্রকাশ্যে ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছিল মেইতেইদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। মেইতেইদের বিরুদ্ধে বাড়ছে ক্ষোভও। বিশেষ করে উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়েছে মিজোরামে। সেখানে বসবাসকারী মেইতেইদের মধ্যে এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
কারণ, মিজোরা কুকিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। মণিপুরের পরিস্থিতির উপর তারা নিয়মিত নজর রেখে চলেছে। আর মিজোরামে খুব কম সংখ্যায় মেইতেইদের বাস। ফলে যে কোনও সময়ে তারা সহিংসতার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে তারা। ইতিমধ্যেই তারা অনেকে ঘর ছাড়তে শুরু করেছে। যদিও তাদের ফেরাতে তৎপর হয়ে উঠেছে মণিপুর সরকার।
ইতিমধ্যে মণিপুর সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ঘরে ফেরাতে বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, মণিপুর সরকার কি মেইতেইদের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। না হলে রাজ্যে কুকিদের উপর নির্যাতন হলেও সরকার সেভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে না অথচ, প্রতিবেশী রাজ্যে মেইতেইদের থেকে আশংকার কথা শুনেই তাদের চাটার্ড বিমানে করে ঘরে ফেরানোর মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে তারা।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, শনিবার মেইতেইদের অনেকেই মিজোরাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মিজোরামের মিজোরা মণিপুরের কুকি-জোমিদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। মণিপুরে ৩ মে থেকে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৮৪জনেরও বেশি কুকি-জোমি মিজোরামে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
আসলে মিজোরামে মেইতেইদের আশংকার আরও একটা বড় কারণ হল, মিজোরামের আন্ডারগ্রাউন্ড মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের জঙ্গিদের একটি সংগঠন ‘পিস অ্যাকর্ড এমএনএফ রিটার্নিজ অ্যাসোসিয়েশন ’(পামরা)-এর পক্ষ থেকে শুক্রবার একটি বিবৃতি জারি করা হয়। সেখানে তারা মিজোরামে বসবাসকারী মেইতেইদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে।
তাদের এই বিবৃতির পর থেকেই মিজোরামে বসবাসকারী মেইতেইরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা এলাকা ছাড়তে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে মণিপুর সরকার আইজলে বসবাসকারী মেইতেইদের প্রতিবেশী রাজ্য অসম ও ইম্ফলে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইজলের এক মেইতেই ছাত্রনেতা বলেছেন, মণিপুরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে দুই মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানোর ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর থেকে মিজোরামের পামরা সংগঠন মেইতেইদের নিরাপত্তার কারণে মিজোরাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে।
আইজলের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত একজন মেইতি সম্প্রদায়ের ব্যক্তি (নাম, পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘‘পরিবারের চার সদস্যর সঙ্গে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে অসমের কাছাড় জেলায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন। একইসঙ্গে অবশ্য তিনি এও দাবি করেছেন যে, এখনও পর্যন্ত তাঁকে কোনও মিজো হুমকি দেয়নি।
তাঁর সঙ্গে কেউ দুর্ব্যবহারও করেনি। তাঁর মতে, মিজোরা খুবই নম্র ও ভদ্র। তা সত্ত্বেও তিনি ও তাঁর পরিবার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। অন্যদিকে, মণিপুর সরকার রবিবার থেকেই মিজোরামে বসবাসকারী মেইতেইদের চাটার্ড বিমানে রাজ্যে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফ্লাইটগুলি আইজল এবং ইম্ফলের মধ্যে চলাচল করবে। মিজোরামের রাজধানী আইজলে সরকারী কর্মচারী, ছাত্র ও শ্রমিক সহ প্রায় ২ হাজার মেইতেই বসবাস করে। তাদের অনেকেই অসমের বরাক উপত্যকার বাসিন্দা।