পারিজাত মোল্লা: শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে উঠে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বিষয়ক মামলা টি। এদিন এই দুর্নীতি মামলায় চাকরিপ্রাপকদের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের নামের তালিকা আদালতে জমা দিতে বললো হাইকোর্ট । এই মামলায় দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি এবং সিবিআইকে আগামী ২৯ অগস্টের মধ্যে তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।আদালত সুত্রে প্রকাশ, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ মামলায় চাকরি পাওয়া ৪২,৯৪৯ জন শিক্ষকের একাংশের বিরুদ্ধে ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে এই মামলায় ৩২,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ। পরে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে এই মামলার এজলাস বদল হয়। মামলা আসে নব নিযুক্ত সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে। বিচারপতি সিনহা পূর্বতন সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখেন। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চও জানায়, -‘সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নতুন করে হওয়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে এই চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের’।
অপরদিকে ‘তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলাতে তাঁকে ‘চাপ’ দেওয়া হচ্ছে’— কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ জানিয়ে জেলে বসে চিঠি লিখেছিলেন দুর্নীতি মামলায় ধৃত কুন্তল ঘোষ। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তলের সেই ‘বিতর্কিত’ চিঠির অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে শুক্রবার দাবি করলো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সিনহার এজলাসে রিপোর্ট দিয়ে সিবিআই জানিয়েছে, -‘কুন্তলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ওই চিঠির কোনও সারবত্তা নেই।’
তবে শুক্রবার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উদ্দেশে বিচারপতি এজলাসে মামলার শুনানি পর্বে জানান , ”এখনও কেন কিং পিন অবধি পৌঁছনো যাচ্ছে না?” প্রাথমিক নিয়োগ কেলেঙ্কারির গভীরে গিয়ে এবার ৩৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির খোঁজ পেল ইডি ।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে একটি রিপোর্ট জমা দেয় এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সম্প্রতি জেল হেফাজতে থাকা কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়ন শীল এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ১৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত এবং ৪৩টি স্থাবর সম্পত্তি প্রসিড অব ক্রাইম হিসাবে অ্যাটাচ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।সুত্র মারফত প্রকাশ, -‘ প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা বাংলা সিনেমা থেকে স্থাবর সম্পত্তি, অস্থাবর সম্পত্তিতেও বিনিয়োগ করা হয়েছে বলেই ইডির রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত ১২৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি এবং নগদ অ্যাটাচ করা হয়েছে’। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে এই রিপোর্ট জমা পড়ে। সিবিআই এর এসপি পদমর্যাদা পূর্ণ আধিকারিকের সই করা রিপোর্টে কুন্তল এর করা অভিযোগ ( সিবিআই হেফাজতে অত্যাচার করে অভিষেক এর নাম বোলানোর চেষ্টার অভিযোগ) ভিত্তিহীন বলে জানানো হল সিঙ্গেল বেঞ্চে। সিল করা খামে সিবিআই কুন্তল ঘোষ এর অভিযোগ নিয়ে রিপোর্ট জমা দিল।
তাদের দাবি, -‘গোটা অভিযোগ ভিত্তিহীন’। সংশ্লিষ্ট জেলখানার বিরুদ্ধেও এদিন অভিযোগ তোলে সিবিআই। নিয়ম অনুসারে ১৮০ দিনের সিসিটিভি ফুটেজ থাকার কথা। কিন্তু এখানে ৭ দিনের বেশি ফুটেজ পাওয়া যায়নি বলে সিবিআইয়ের অভিযোগ ।বিচারপতি সিনহা এদিন জানতে চান, ‘এত টাকা যদি এই দুর্নীতি থেকে উঠে থাকে, তাহলে আপনারা এখনও এই দুর্নীতির কিংপিন কে, তাকে কেন খুঁজে পাচ্ছেন না?’ মামলাকারী রমেশ মালিকের আইনজীবী সিঙ্গেল বেঞ্চ কে জানান,-‘ ৪২ হাজার ৯৪৯ জন এখনও চাকরি করছেন যাঁরা নিয়ম মেনে চাকরি পাননি’।
সেই বিষয়ে হাইকোর্ট সিবিআই কে নির্দেশ দেয়, -‘ ওই শিক্ষকদের মধ্যে কারা কারা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন তা অবিলম্বে খুঁজে বের করে তালিকা তৈরি করে আদালতে জমা দিক’।এদিনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়তে হয়। বিচারপতি তাদের আইনজীবীদের বলেন, -‘ আপনারা যখন এই দুর্নীতির একটি গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছবেন, তখন এই তদন্তের প্রয়োজনীয়তা আদৌ থাকবে তো। আপনাদের এই তদন্ত কী অনন্তকাল ধরে চলছে।
সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক পুর নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পুরসভার নাম আর পুর আইন চেয়ে পাঠাচ্ছে। এটা কোনও ধরণের তদন্ত। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, আপনাদের তদন্তকারীরা তদন্ত নিয়ে মাথাই ঘামাচ্ছে না’। এর পরিপেক্ষিতে সিবিআই জানায়, -‘ সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডি সিবিআইয়ের তদন্তে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি। এরফলে তদন্ত চালিয়ে যাওয়ায় কোনও বাধা নেই’।