সেখ কুতুবউদ্দিন: কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে আলোচনা করে চার বছরের ইনন্ট্রিগ্রেটেড স্নাতকোত্তর কোর্স চালুর নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ শিক্ষা দফতর। ভর্তির প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। ভর্তির আবেদন শেষ হচ্ছে কাল শনিবার। অধিকাংশ কলেজে গত বছর থেকে আবেদন কম জমা পড়েছে। বৃহস্পতিবার বহু কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে পুবের কলমের প্রতিবেদকের ছাত্র ভর্তি সংক্রান্ত কথা হচ্ছিল। কলেজের অধ্যক্ষদের বক্তব্য, চার বছরের স্নাতকের অনার্স কোর্সে ভর্তিতে পড়ুয়াদের অনীহা রয়েছে। অনার্স কোর্সে আগের বছর থেকে আবেদনও সামান্য কম জমা পড়েছে। পাশাপাশি বিজ্ঞানের কোর্সগুলিতেও রাজ্যের অনেক কলেজে আবেদন কম জমা পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
জয়পুড়িয়া কলেজের প্রিন্সিপ্যাল অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন,, এই কলেজের আসন রয়েছে প্রায় ২৫০০। এই আসনগুলিতে ভর্তির জন্য ইতিমধ্যে ২২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। শহিদ নুরুল ইসলাম মহাবিদ্যালয়ের প্রিন্সিপ্যাল মুহাম্মদ আফসার আলি, আগের বছর থেকে আবেদন কম জমা পড়েছে।
কারণ হিসেবে জানা যাচ্ছে, গ্রাম বাংলার কলেজগুলিতে চার বছরের অনার্স কোর্সে আগ্রহ বেশি কম দেখাচ্ছে। গ্রাম বাংলার পড়ুয়ারা স্নাতক কোর্স শেষ করেই চাকরিতে ঢোকার চেষ্টা করে। তাই চার বছরের স্নাতকে সময় বেশি লেগে যাবে। তাই তারা তিন বছরের অনার্স কোর্স দিকেই বেশি ঝুঁকছে বলে আবেদনকারীদের কাছ থেকেও জানা যাচ্ছে।
এই আবেদনের বিষয়ে স্কটিশচার্চ কলেজের প্রিন্সিপ্যাল মধুমঞ্জুরি মণ্ডল এদিন বলেন, এটি সংখ্যালঘু কলেজ। আবেদন প্রক্রিয়া আগেই সম্পন্ন হয়েছে। এখন ভর্তি চলছে। ১২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। আগের বছর থেকে আবেদন একটু কম জমা পড়েছে বলে জানান ওই কলেজের অধ্যাক্ষা। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও স্নাতক কোর্স চালু রয়েছে।
এখানেও চার বছরের অনার্সে এ বছর পঠনপাঠন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ওবাইদুল্লাহ বলেন, স্নাতক চার বছর হলেও চলতি শিক্ষা বর্ষে ২২ শতাংশের বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
চলতি বছরে যোগমায়া দেবী, এজেসি বোস, নিউ আলিপুর, সুরেন্দ্রনাথ, মণীন্দ্র কলেজেও ওই তিনটি বিষয়ের আবেদন অন্যান্য সাবজেক্টের থেকে অনেক কম বলে জানাচ্ছেন অধ্যক্ষরা। যোগমায়া দেবী কলেজের অধ্যক্ষা সর্বাণী সরকার বলেন, ‘বিজ্ঞানের কোর বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ কমছে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হচ্ছে বেশি।’ এজেসি বোস কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি বলেন, ‘বিজ্ঞানের মূল বিষয়ে পড়ুয়াদের আগ্রহ এতো কম, ভাবলেই খারাপ লাগছে। তাও যা আবেদন জমা পড়েছে, তাদের মধ্যে আবার অনেকেই ভর্তিই হবে না।’
সুরেন্দ্র নাথ কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল করের মতে, ‘ওই তিনটি বিষয়ে স্কুলস্তর থেকেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে পড়ুয়ারা।’ মণীন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্তর কথায়, ‘যে পড়ুয়ারা কেবল ডিগ্রি ও চাকরির জন্য কলেজে ভর্তি হচ্ছে, তারা সহজতর বিষয়গুলিতেই ভর্তি হতে চাইছে।’
মণীন্দ্র কলেজে যেখানে বিকম অনার্সে দু হাজারের মতো আবেদন পড়েছে, সেখানে ফিজিক্স, ম্যাথে এখনও মোট আসনের থেকে কম আবেদন জমা পড়েছে।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের প্রবীণ অধ্যাপক বরুণ রায়চৌধুরীর কথায়, ‘ফিজিক্সে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই আর পরে থাকছেন না।
উচ্চ শিক্ষা দফতরের তত্বাবধানে থাকা কলেজগুলিকে পাঠানো নির্দেশিকা অনুসারে, ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কলেজে স্নাতকে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হবে। অনলাইনে ওইদিন থেকে পড়ুয়ারা আবেদন করতে পারবে অনলাইনে। আবেদন করার শেষ তারিখ ১৫ জুলাই, শনিবার।
তারপর শুরু হবে আবেদনের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করার পালা। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে কলেজগুলিকে মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে হবে ভর্তি প্রক্রিয়া। অগাস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে স্নাতকের নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করবে কলেজগুলি।
উচ্চশিক্ষা দফতর যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এবারে কলেজে ভর্তি হবে মেধার ভিত্তিতে। পুরো প্রক্রিয়াই হবে অনলাইনে।