পারিজাত মোল্লাঃ বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিচারপতি অপূর্ব সিংহ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে । দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শোনার পর ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, -‘আপাতত রক্ষাকবচ দেওয়া হচ্ছে অভিযুক্ত বিধায়ককে’। ডিভিশন বেঞ্চ এদিন আরও জানিয়েছে, -‘ আপাতত নওশাদ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কোনও কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবে না পুলিশ। তবে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে ‘। ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীকে অন্তর্বর্তীকালীন রক্ষাকবচ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রথমে নিউটাউন থানায় পরবর্তীতে বউবাজার থানায় গিয়ে এক তরুণী অভিযোগ জানান যে, -‘ দীর্ঘদিন ধরে নওশাদ সিদ্দিকী তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন। তাঁকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা করেননি। উলটে শারীরিক অত্যাচার করা হয়েছে তাঁকে’। এই অভিযোগের বিষয় সামনে আসতেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নওশাদ। সেই মামলাতেই এদিন তিনি রক্ষাকবচ পেলেন। যদিও ডিভিশন বেঞ্চ এটা জানিয়েছে, -‘ এই মামলায় সম্পূর্ণরূপে সহযোগিতা করতে হবে তাঁকে এবং তদন্তকারীরা তাঁকে চাইলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন’। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৮ জুলাই রয়েছে বলে জানা গেছে । ততদিন পর্যন্ত নওশাদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করতে পারবেন না পুলিশ। ভাঙড়ে একের পর এক সংঘর্ষে যখন উতপ্ত রাজ্য রাজনীতি, তখন এই নির্দেশ নওশাদের জন্য স্বস্তির বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। গত ৫ জুলাই নওশাদের বিরুদ্ধে নিউটাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এক তরুণী। সেই সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিতি ছিলেন তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত। ঘটনাচক্রে তৃণমূলের তরফে ভাঙড়ের সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন সব্যসাচী। পরবর্তী সময়ে বউবাজার থানায় নওশাদের বিরুদ্ধে রুজু হয় ধর্ষণের মামলাটি।ধর্ষণের মামলা রুজু হওয়ার পরদিন মেট্রোপলিটন কোর্টের বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেন অভিযোগকারী তরুণী। পুলিশের এই পদক্ষেপকে ‘অতি সক্রিয়তা’ হিসেবেই দেখেছেন অনেকেই। যদিও প্রথম থেকেই গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবেই দেখছে আইএসএফ। এ প্রসঙ্গে নওশাদ সংবাদ মাধ্যমে বলেছিলেন, ‘এই অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। আইনি পথেই বিষয়টি নিয়ে লড়াই হবে।’ সেই মতো হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেন তিনি। আগামী দিনে আদালতে এই মামলা কোন দিকে যায়, সেটাই দেখার।তবে অভিযোগকারী তরুণী নওশাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেও আইএসএফ বিধায়ককে তিনি কতদিন চেনেন? কীভাবে চিনলেন? সেসব নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর দেননি মহিলা। আইএসএফ-ও প্রথম থেকেই দাবি করেছে যে,-‘ তাদের বিধায়ককে পঞ্চায়েত ভোটের আগে ফাঁসাতেই এমন কাজ করা হয়েছে’। নওশাদ নিজেও জানিয়েছেন, রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই তিনি জানেন যে -‘ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হবে। এমন পরিস্থিতি তৈরির কথা তিনি ভালো করেই বুঝেছেন আগে। তাই লড়াইয়ের জন্য তিনি সদাসর্বদা প্রস্তুত’।প্রসঙ্গত, আইএসএফের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনে কলকাতার বেশ কয়েকটি মামলায় মাস খানেক জেল হেফাজতে ছিলেন নওশাদ সিদ্দিকী। পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জামিন পান তিনি।