পারিজাত মোল্লা: ‘রক্তাক্ত’ পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি চলে। কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মামলায় বড়সড় নির্দেশ জারি হল এদিন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক হানাহানির ঘটনায় বিএসএফের আইজি (ফোর্স কো অর্ডিনেটর) এবং রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট জমা দিতে বলল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ,’ আহত ব্যক্তিদের ভাল চিকিত্সা পরিষেবা দিতে হবে রাজ্য সরকারকে’।
এদিন কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর করা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, -‘ সরকারি হাসপাতালে চিকিত্সা পরিষেবা দিতে হবে আহতদের।প্রয়োজনে বড় হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিত্সা করাতে হবে রাজ্যকে’। এর পাশাপাশি ভোট হিংস্বায় নিহতদের শেষকৃত্যে রাজ্যকে সব রকম সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট । ময়নাতদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঘটনাগুলি নিয়ে রিপোর্ট দিতে হবে। রিপোর্ট আসার পরেই ক্ষতিপূরণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা হাইকোর্ট।
সোমবার এই মামলায় সওয়াল করতে উঠে অধীর জানান , ‘পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে। খুন, মারধর, ব্যালট পেপার লুট করা হয়েছে। এ রাজ্যে গণতন্ত্রকে উপহাস্য করে তোলা হয়েছে।’
তাঁর দাবি, -‘ সরকার, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন চক্রান্ত করে এই নির্বাচনে বাহু শক্তির পরিচয় দিয়েছে’।
এই প্রসঙ্গে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর প্রসঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উনি আমাদের দেশে পঞ্চায়েতরাজ শুরু করেছিলেন। স্থানীয় স্তরে সরকারি সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এখানে গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের শিকার সমাজের সর্বস্তর। এমন সময়ে একটুও দেরি না করে আদালতের দরজায় ছুটে এসেছি।’
সওয়াল করার পাশাপাশি হাইকোর্টে নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে পঞ্চায়েতে মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার দেওয়ার আর্জি জানান বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ।
এদিন এজলাসে অধীর বাবু বলেন ‘ধর্মাবতার, নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক। কেন আদালতের নির্দেশ মানা হল না, যার ফলে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হল? প্রাক্তন কোনও বিচারপতির নজরদারিতে তদন্ত করা হোক।’ সিবিআই দিয়ে খুনের তদন্ত করা হোক। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হোক। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে জানি না কোথায় থামবে। একশোরও বেশি আহতদের সঠিক চিকিত্সা হচ্ছে না হাসপাতালে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও ৮০ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। ইচ্ছাকৃত ভাবে আদালতের নির্দেশ অবজ্ঞা করা হয়েছে।’
অধীরের এহেন বক্তব্যের পরবর্তীতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার আবেদন মতো আমরা তিনটি বিষয় খুঁজে পেয়েছি। হত্যার তদন্ত করা, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা’। আহতদের চিকিত্সার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। আদালতে অভিযোগ জানিয়ে অধীর বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত গরিব মানুষরা সঠিক চিকিত্সা পাবেনা, তাই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। হাজার হাজার বুথে লুট হয়েছে। মাত্র ৬৯৬টি বুথে পুনর্নির্বাচন করা হয়েছে।’ রাজ্যের আইনজীবী কে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন , ‘অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে সঠিক পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে না। কেন? কত কেস রেজিস্ট্রার হয়েছে, সেই তথ্য দিন’। এর প্রতুত্তরে এজি জানান – ‘পিটিশনে অনেক কিছু পরিষ্কার করে বলা নেই। কোথায় চিকিত্সা হচ্ছে না, নির্দিষ্ট করে তা মামলায় বলা নেই’।
এরপর মামলাকারী অধীর কে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার পিটিশনে অনেকগুলো জায়গায় অসম্পূর্ণ রয়েছে। ক্ষতিপূরণ ছাড়া বাকি আবেদনগুলি আদালত অবমাননা মামলায় অন্য ডিভিশন বেঞ্চে বিচারাধীন রয়েছে।’ এদিন।আদালতের নির্দেশে স্পষ্ট হয়েছে যে, ‘ পঞ্চায়েত ভোটের দিন যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের সু-চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্যকে। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের আত্মীয়দের সত্কারের কাজেও সাহায্য করতে হবে’।