পুবের কলম প্রতিবেদক: বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভা ১৩১ বছরের প্রতিষ্ঠান। অখণ্ড বাংলার বাঙালি বৌদ্ধদের সব থেকে প্রাচীন প্রতিষ্ঠান এটি। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার পক্ষ থেকে রবিবার সংবর্ধনা দেওয়া হল পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরানকে। এদিনের অনুষ্ঠানে আরও সংবর্ধিত করা হয় ড. দীপা দাসকে। তিনি লাগাতার ৪ ঘণ্টা নজরুল গীতি গেয়ে ওয়ার্ল্ড ম্যাজিক বুকে নাম তুলেছেন। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন ধর্মাঙ্কুর সভার প্রেসিডেন্ট ড. রতনশ্রী মহাথেরো, সংখ্যালঘু কমিশনের আমন্ত্রিত সদস্য ড. অরুণজ্যোতি মহাথেরো, দীপক কুমার বড়ুয়া, ডা. প্রকাশ মল্লিক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের আয়োজেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার ট্রাস্টি ও কোষাধ্যক্ষ অমলেন্দু চৌধুরি। সঞ্চালনা করেন শ্রাবন্তী চক্রবর্তী। এছাড়াও বৌদ্ধদের বহু সমাজকর্মী এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজ্যের সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ইমরান বলেন, ১৩১ বছরের পুরনো বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভার আমন্ত্রণে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। বাংলার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এক সময় বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জনসংখ্যার দিক থেকে প্রাধান্য ছিল। বাংলায় বৌদ্ধ পাল রাজাদের শাসনের কথা সকলেই জানেন। কিন্তু পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপর যে অত্যাচার হয়, তাতে বাংলার বৌদ্ধদের অবক্ষয় দেখা দেয়। কিছু বৌদ্ধ ধর্মগুরু পালিয়ে নেপালে চলে যান। তাঁরা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বৌদ্ধদের লেখা চর্যাপদ। এটাই বাংলাভাষার আদি প্রমাণ বলে ধরা হয়।
তিনি আরও বলেন, বি আর আম্বেদকর ভারতে ফের বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সংখ্যার প্রসার ঘটান। দলিত ও কথিত অচ্ছুৎরা লক্ষ লক্ষ সংখ্যায় বাবা সাহেবের নেতৃত্বে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। ইমরান বলেন, সংখ্যালঘুদের জন্য সরকার প্রদত্ত যেসব সুবিধা রয়েছে, তা বৌদ্ধ-ধর্মালম্বীরা গ্রহণ করেন না বললেই চলে। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে বলে তিনি জানান।
ইমরান বলেন, তিনি যে সংখ্যালঘু কমিশনে প্রথম বৈঠক করেন, তাতে বৌদ্ধ প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তাঁদের কোনও শ্মশান নেই। ইমরান বলেন, এ বিষয়টি তিনি পুরসভা ও সংখ্যালঘু মন্ত্রকের কাছে উত্থাপন করবেন। তিনি বৌদ্ধদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ড. অরুণজ্যোতি ভিক্ষু বলেন, প্রায় ৫ লক্ষাধিক বাংলাভাষী ও নেপালী বৌদ্ধরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বসবাস করেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘রাজ্যের বাংলাভাষী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য কোন সমাধিক্ষেত্র নেই। এমন কী আদমসুমারীতেও বাংলাভাষী বৌদ্ধদের প্রকৃত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয় না। তাঁদেরকে হিন্দু বলে লেখা হয়।
ড. রতনশ্রী মহাথেরো বলেন, আহমদ হাসান ইমরান বৌদ্ধদের সম্পর্কে অনেক কথাই জানেন। তিনি আশা করেন, সংখ্যালঘু কমিশন বৌদ্ধদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন।
অমলেন্দু চৌধুরিও বৌদ্ধদের সম্পর্কে নানা তথ্য প্রদান করেন এবং আহমদ হাসান ইমরানের হাতে বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশকিছু বাংলা পুস্তক তুলে দেন।
উপস্থিত বৌদ্ধ পুরুষ ও মহিলারা ইমরানকে বলেন, তাঁরা আশা করেন, বৌদ্ধদের সংস্কৃতি ও ধর্মকে এবং তাদের সমস্যাগুলি তুলে ধরার ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু কমিশন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।