পুবের কলম, ওয়েবডেস্কঃ এতিমখানা যাত্রা শুরু। শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় ও মনের জোড়ে আইএএস অফিসার হওয়া যায় সেটাই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন মহাম্মদ আলি সাহেব। সাধারণ মানুষ নিজের জীবনের অকৃতকার্যের জন্য যেখানে নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয়, সেখানে শুধু নিজের জীবন ভাগ্যের হাতে ছেড়ে না দিয়ে, সীমাহীন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে একজন সফল আইএসএস অফিসার মহাম্মদ আলি সাহেব।
মোহাম্মদ আলি মনে করেন, প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য আগে থেকেই নিজের লক্ষ্যকে স্থীর করে নিতে হবে, যেকোনও সময় আপনার জীবনে পরিবর্তন আসতে পারে। তাই নিজের লক্ষ্য থেকে সরে আসলে চলবে না। ২০১১ ব্যাচের আইএএস অফিসার মহাম্মদ আলি সাহেব অন্যের জীবনে অনুপ্রেরণার একটি নাম।
শৈশব শুরু হয়েছিল বাজারে বাঁশের ঝুড়ি বেচার মধ্য দিয়ে। তারপর এতিমখানায় বড় হয়ে ওঠা মোহাম্মদ আলির। দারিদ্র্যের মধ্যে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সে। এইভাবে তার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া। তবে সফলতার পথটা সহজ ছিল না।
কেরলের ছোট্ট গ্রাম যাকে অজপাঁড়াগা বললেও ভুল হবে না, সেই মাল্লাপুরম জেলার এদাভান্নপাড়ায় জন্ম হয় মোহাম্মদ আলির। বাড়িতে অভাবের কারণে বাবা কোরোথ আলির সঙ্গে পান ও বাঁশের তৈরি ঝুড়ি বিক্রি শুরু করে মহাম্মদ আলি। কিন্তু ১৯৯১ সালে দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে বাবার মৃত্যু তার জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনে। তখন মাত্র ১১ বছর বয়স মহাম্মদ আলি সাহেবের। স্বামীকে হারিয়ে পাঁচ ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অথৈ চলে পড়েন মহাম্মদ আলির মা ফতিমা। অত্যন্ত অভাবের কারণে যাতে দুবেলা যাতে ছেলেমেয়েগুলো পেটে ভাত জোটে তার জন্য ফতিমা তার সন্তানদের এতিমখানায় পাঠিয়ে দেন।
এতিমখানায় শিশুদের ঠিকমতো রাখা হয় না, তাদের আধপেটা খেয়ে থাকতে হয়, এই সমস্ত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেন মহাম্মদ আলি। শিহাবের এই এতিমখানা মহাম্মদ আলি সাহেবে জীবন বদলে দেয়। বলা যায়, এখান থেকেই নতুন পথের দিশা খুঁজে পান তিনি। যা মহাম্মহ আলি সাহেবকে একজন সফল আইএএস অফিসার হিসেবে গড়ে তোলে। এতিমখানাতেই চলতে থাকে পড়াশোনা। এখান থেকেই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে সফলভাবে কৃতকার্য হন তিনি।
মহাম্মদ আলি সাহেবের কথায়, এই এতিমখানাটি তার কাছে স্বর্গের থেকে কিছু কম ছিল না। যা তার জীবন পাল্টে দিয়েছে। তিনি এই এতিমখানা থেকে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বন বিভাগ, জেল ওয়ার্ডেন এবং রেলওয়ে টিকিট পরীক্ষক ইত্যাদি পদে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মাত্র ২৫ বছর বয়স থেকে তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকেন। এসএসএলসি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নিয়ে সরকারি স্কুলে শিক্ষকের চাকরি পান। কিন্তু থেমে থাকে না মহাম্মদ আলির স্বপ্ন। এরপর তিনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য নিজেকে তৈরি করতে থাকেন।
সাংবাদিকদের কাছে এক সাক্ষাৎকারে মহাম্মদ আলি সাহেব জানান, এতিমখানায় থাকাকালীন তিনি রাতের বেলা পড়াশোনা করতেন। কারণ সকালে কেরলের ওয়াটার অথরিটির অধীনে একজন চতুর্থ শ্রেণির হিসেবে কাজ করতেন। আবার হোটেলে কেরানি এবং মোটর অপারেটর হিসাবেও কাজ করতে হয়েছে। তাই রাতে পড়াশোনার সময় বেছে নেন তিনি। এতিমখানার একটা ঘরে আরও বহু ছেলে মেয়ে থাকত। তাই যাতে ওদের ঘুমোনোর কোনও অসুবিধে না হয়, তা জন্য বিছানার চাদর মাথা পর্যন্ত ঢেকে তার মধ্যে কখনও ডিম লাইট বা টর্চয়ের আলো জ্বেলে পড়াশোনা করতেন মহাম্মদ আলি।
তবে এত সংগ্রামের পরেও সাফল্য সহজে আসেনি মহাম্মদ আলির জীবনে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দু’বার অকৃতকার্য হওয়ার পর তৃতীয়বারের পরীক্ষায় সফলতা পান তিনি। ২০১১ সালে তিনি ২২৬ তম Rank করে ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হন। তবে ইংরেজিতে খুব ভালো না হওয়ার কারণে, পরীক্ষার ইন্টারভিউয়ের সময় শিহাবের একজন ট্রান্সলেটরের সাহায্য নিতে হয়। এরপরেও ৩০০’র মধ্যে ২০১ নম্বর পেয়েছিলেন। তার প্রথম পোস্টিং হন নাগাল্যান্ডের কোহিমাতে।
মহাম্মদ আলি সাহেবের জীবন অন্যের জীবনে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।