পারিজাত মোল্লা: অভিযোগ, গরু পাচারকারীদের দেওয়া ঘুষের টাকায় প্রায় ৪৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বানিয়েছিলেন অনুব্রত। এই মামলায় বাবা ও মেয়ে দু’জনেই এখন জেলবন্দি। ঠাঁই হয়েছে দিল্লির তিহাড় জেলে। পরিস্থিতি এমন যে মামলা লড়ার টাকা পর্যন্ত নেই। এই পরিস্থিতিতে আদালতের দ্বারস্থ অনুব্রত-কন্যা সুকন্যা মন্ডল। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, মামলা লড়ার খরচ জোগাড় করতে পারছেন না তিনি। কারণ, তাঁর মা আগেই মারা গিয়েছেন। তিনি এবং তাঁর বাবা অনুব্রত মণ্ডল দু’জনেই তিহাড় জেলে বন্দি। বাড়িতে মামলা লড়ার টাকা জোগাড় করে দেওয়ার মতোও কেউ নেই’। তাই তাঁকে ছ’সপ্তাহের জন্য জামিন দেওয়া হোক, এই মর্মে আর্জি সুকন্যার। আদালতে তিনি জানিয়েছেন, ‘ ছ’সপ্তাহের জন্য জামিন পেলে তিনি আইনজীবীদের ফি দেওয়ার অর্থ জোগাড় করতে পারবেন’।
সুকন্যার আবেদনের ভিত্তিতে ইডি-র বক্তব্য কী? তা জানতে চেয়েছেন দিল্লি রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিশেষ আদালতের বিচারক রঘুবীর সিং। আগামী ১০ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। উল্লেখ্য, রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের বিচারক রঘুবীর সিং-এর এজলাসেই বারবার আর্জি জানিয়েও জামিন পাননি অনুব্রত মন্ডল। বাধ্য হয়েই মামলা অন্য বিচারকের বেঞ্চে সরানোর আর্জি জানিয়েছেন। দিল্লি হাইকোর্টেও তিনি জামিনের আর্জি জানিয়েছেন। দু’টি মামলারই শুনানি হবে আগামী মঙ্গলবার।
প্রসঙ্গত, এর আগে জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন সুকন্যাও। সেই সময় ইডি-র যুক্তি, ‘ সুকন্যাও তাঁর বাবার মতো প্রভাবশালী। তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হলে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করার চেষ্টা করতে পারেন’। জেরায় অবশ্য সুকন্যা জানিয়েছেন,-‘ তিনি গরু পাচারের কিছুই জানতেন না’। তবে বাস্তবে তিনি কালো টাকা সাদা করার কাজ দেখভাল করতেন বলেই দাবি ইডি-র। তাঁর নামে চালকল-সহ একাধিক সংস্থার মালিকানাও রয়েছে।
খাতায়-কলমে স্কুলশিক্ষিকা হলেও তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি রয়েছে। এজলাস বদলের আবেদন জানিয়ে রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতে আবেদন অনুব্রত মণ্ডলের। রাউজ অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক রঘুবীর সিংয়ের এজলাস থেকে মামলা সরানোর জন্য পিটিশন দাখিল করেছেন অনুব্রত মণ্ডল।
অনুব্রতের দাবি, ‘ বিচারক রঘুবীর সিংয়ের বেঞ্চে যথাযথ বিচার পাওয়া যাচ্ছে না’।
রাউজ অ্যাভিনিউ কোর্টের স্পেশাল সিবিআই বিচারক রঘুবীর সিং। তাঁর এজলাসেই মূলত অনুব্রত মণ্ডল-সহ যাবতীয় গরু পাচার মামলার শুনানি একসঙ্গে চলছে।
অনুব্রত মণ্ডলের দাবি, ‘বিচারক রঘুবীর সিং নিরপেক্ষ নন। বিচারপতি সিং এমন কিছু মন্তব্য, এমন কিছু সময়ে করেছেন যা সমর্থনযোগ্য নয়। সেই কারণেই এজলাস বদলের আর্জি তাঁর’।
চলতি সপ্তাহে এই আবেদন নিয়ে স্পেশাল সিবিআই জাজ অরুণ ভরদ্বাজের এজলাসে শুনানি হয়।
অনুব্রতর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইডির কোনও বক্তব্য রয়েছে কি না? তা জানতে চান স্পেশাল সিবিআই বিচারক অরুণ ভরদ্বাজ।
ইডির আইনজীবী নীতেশ রানাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করেন স্পেশাল সিবিআই বিচারপতি।
আইনজীবী নীতেশ রানা জানিয়েছেন, ‘তিনি মতামত জানাতে চান। এর জন্য সময়ও চান তিনি’।বিচারক এজলাসে জানান , -‘১০ দিন সময় এর জন্য যথেষ্ট’।
এর পাল্টা ইডির আইনজীবী জানান, -‘ তাঁর আরও কিছুটা সময় দরকার’। অনুব্রত মণ্ডলের আইনজীবী বলেন, -‘আরও কম সময় দেওয়া হোক। কারণ, এ মামলার দ্রুত শুনানি প্রয়োজন’।
ইডিকে মতামত জানানোর জন্য ১৪ দিনের সময় দিয়েছেন বিচাররক। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৯ জুলাই। এজলাস বদলের আবেদনের মামলার বিষয়ে গরুপাচার কাণ্ডে যুক্ত অন্যান্য অভিযুক্তদেরও মতামত জানাতে বলা হয়েছে আদালতের তরফে।