শুভায়ুর রহমান: পেশার তাগিদে কখনও ভিন রাজ্যে রাজমস্ত্রীর শ্রমিক হিসাবে কাজে গিয়েছেন । আবার কখনও হাটে হাটে মনোহারী সামগ্রী বিক্রি করেন। তবে এখন আপাতত বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন। তবুও লিখতে ভোলেন না বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার রূপপাল গ্রামের বাসিন্দা হানিফ মিদ্যা ও আজমিরা বিবির সন্তান হামিরউদ্দিন মিদ্যা।
মাঠঘাট-নদী, কৃষিকাজ, গ্রাম্যজীবনই তাঁর লেখার মূল বিষয়। তাঁর লেখায় উঠে আসে সমাজের অবহেলিত মানুষের কথা। সেই লেখায় হামিরউদ্দিন মিদ্যাকে এনে দিল দেশের সাহিত্যের সেরার সম্মান।
মাত্র ২৬ বছর বয়সে হামিরউদ্দিন মিদ্যা পেলেন জাতীয় সাহিত্য অ্যাকাডেমি যুব পুরস্কার ২০২৩। শুক্রবারই অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে হামিরউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। তিনি ‘মাঠরাখা’ গল্পগ্রন্থটির জন্যই সাহিত্য অ্যাকাডেমি যুব পুরস্কার পাচ্ছেন। গল্পগ্রন্থে মোট ১৮টি গল্প রয়েছে।
বইটি ‘সোপান’ প্রকাশনা থেকে ২০২২ সালের কলকাতা বইমেলায় প্রকাশিত হয়। ‘মাঠরাখা’ বইটি ২০২২ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে ‘ইলা চন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার’ ও কৃত্তিবাস থেকে ‘ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় সম্মাননা’ পায়।
‘আজরাইলের ডাক’ নামে প্রথম গল্পগ্রন্থ ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়। তারপর ২০১৯, ২০২১ ও ২০২২ সালে মনোনয়ন পায়। তবে এ বছর তাঁর ‘মাঠরাখা’ বইটি সেরা মনোনীত হয়েছে।
জানা গেছে, সাহিত্য অ্যাকাডেমি দেশের কুড়িটি ভাষায় কুড়িজন সাহিত্যিকের নাম বেছে নিয়েছেন। বাংলা ভাষায় হামিরউদ্দিনের লেখা গল্পগ্রন্থটি সেরা বিবেচিত হয়েছে।
হামিরউদ্দিনের প্রথম গল্প ‘লগ্নউষা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া রাজ্যের প্রায় সবক’টি দৈনিক পত্রিকা ও শারদ সংখ্যায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা আজরাইলের ডাক গল্পটি ‘দ্য অন্তনিম’ নামে একটি ম্যাগাজিনে ইংরেজিতে অনুবাদ হয়।
পরে এই গল্পটিই ইতালির ‘দ্য ড্রিম মেচিন’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া মুন্সি প্রেমচাঁদ প্রতিষ্ঠিত দিল্লি থেকে প্রকাশিত সর্বভারতীয় হিন্দি পত্রিকা ‘হংস’-তে গল্পটি হিন্দিতে অনুবাদ হয়েছে।
গল্পকার হামিরউদ্দিন মিদ্যা জানান, আমি লিখে যায়। পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয়। মাঠ, বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ নিয়েই থাকি আমি। সময় করে লিখি।’ হামিরউদ্দিন মিদ্যা ১৯৯৭ সালের ১৪ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। সে সোনামুখীর ধুলাই রামকুমার মৃণ্ময়ী বিদ্যা মন্দির ’ স্কুল থেকে ২০১৩ সালে মাধ্যমিক ও ২০১৫-তে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন।
পারিবারিক কারণে পড়াশোনায় ছেদ পড়ে। আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে তাকে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হতে হয়। কয়েক বছর পর আবার সে নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়। চলতি বছরই তাঁর স্নাতকে ডিগ্রি কোর্স সম্পূর্ণ হওয়ার কথা রয়েছে। হামিরউদ্দিন জানান, বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে তাই, পড়াশোনো সম্পূর্ণ হয়নি। তবে মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।’ পুরস্কার প্রাপ্তিতে খুশি হামিরউদ্দিন তো বটেই তাঁর মা-বাবাও। প্রচারের আড়ালে থাকা ছেলেটির কথায়, আমার প্রথম গল্পের বইটি আগেও মনোনয়ন পেয়েছিল। তবে এবার আমার দ্বিতীয় বইটি পুরস্কার পেল।’