পারিজাত মোল্লা:মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি রাজশেখর মান্থার ‘উত্তপ্ত: ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। কতজন জওয়ান থাকবেন নিরাপত্তায়? এই বিষয়ে কেন্দ্রকে দ্রুত বিবেচনা করার নির্দেশও দিয়েছে হাইকোর্ট ।
চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পেশকে কেন্দ্র করে চোপড়া, ক্যানিং-এর পাশাপাশি উত্তপ্ত ভাঙড়ের অশান্ত পরিবেশের সাক্ষী থেকেছে রাজ্য । দফায় দফায় বোমা-গুলিতে মৃত্যুও হয়েছে ভাঙড়ের এক আইএসএফ কর্মীর । এই পরিস্থিতিতে শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন ভাঙড় বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী । এরপরেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখেছিলেন নওশাদ। তিনি খুন হয়ে যেতে পারেন বলে সেই চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি।এরপর গত সোমবার নিজের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ভাঙড়ের বিধায়ক। এরপর তাঁকে প্রশ্ন করেন বিচারক । তিনি বলেন, “আপনি তো আপনার নিরাপত্তার কথা বলছেন। ভাঙড়ের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে যে ব্যবস্থা হয়েছে তাতে আপনি কি সন্তুষ্ট?” জবাবে নওশাদ সিদ্দিকী বলেন, “আমি ভাঙড়বাসীর নিরাপত্তার জন্য রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছি।
নির্বাচন কমিশনেও গিয়েছি। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর দরজায় গিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোনও ক্ষেত্রেই সেরকম সদর্থক উত্তর পাইনি।”অবশেষে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে মামলাটি ওঠে । বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ,-‘ রাজ্যের বিশাল সংখ্যক বিধায়ক নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। ভাঙরের বিধায়কের বর্তমান নির্বাচনের পরিবেশে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পাওয়ার প্রয়োজন আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা দ্রুত বিবেচনা করে এই নিরাপত্তা দিতে হবে’। আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানিতে এই নিয়ে কেন্দ্র তার রিপোর্ট দেবে।আদালতে নওশাদের আইনজীবী ফিরদৌস শামীম জানানো , – “এই রাজ্যে বিজেপির ৭৭ জন বিধায়ক কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা পান। রাজ্যের শাসকদলের বিধায়করাও পান। এমনকি শওকত মোল্লার মতো বিতর্কিত বিধায়কও জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। নওশাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা চান, রাজ্য পুলিশের নয়।” এক্ষেত্রে কেন্দ্রের আইনজীবী বলেন, “এই মুহূর্তে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের নির্দেশ বহাল রাখায় এই রাজ্যের সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে’। এরপর আইনজীবী ফিরদৌস শামীম বলেন, “যেহেতু কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবেই আর ভাঙড়ে সেই বাহিনীর অংশ যাবে। সেখান থেকে বিধায়কে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।” দুই আইনজীবীর প্রশ্নোত্তর শোনার পরেই বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশ দেন, -‘ নওশাদ সিদ্দিকিকে নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। দ্রুত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। কতজন নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ করা হবে তা মূল্যায়ণের পরেই জানা যাবে’ ।শাসকদল তৃণমূল এবং.আইএসএফ কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় রক্ত ঝরেছে। হয়েছে মৃত্যুও। এই অবস্থায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। এই ইস্যুতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার আদালত জানালো, -‘তাঁকে নিরাপত্তা দেবে কেন্দ্রীয় বাহিনী’।কিছুদিন আগেই ক্যানিং পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লাকে জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। তারপর থেকেই নওশাদ সিদ্দিকীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। খুন হওয়ার আশঙ্কা আগেই প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তাই আদালতের দারস্থ হয়ে নিজের নিরাপত্তা দাবি করেছিলেন এই বিধায়ক। তখন থেকে আভাস একটা মিলেছিল যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা তিনি পেতে পারেন। অবশেষে তাই হল। কলকাতা হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ, বিধায়কের নিরাপত্তায় কতজন জওয়ান দরকার, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে কেন্দ্রকে। বিচারপতি মান্থার পর্যবেক্ষণ, -‘বর্তমান নির্বাচনের পরিবেশে ভাঙড়ের বিধায়কের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে’।এদিন আবার সুপ্রিম কোর্টে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। পঞ্চায়েত মামলার শুনানিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তাতেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে। অর্থাত্ তারা কলকাতা হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রেখেছে।