পুবের কলম ওয়েবডেক্স: মাদ্রাসায় পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক প্রক্রিয়াতেও বিলম্ব হওয়ার ফলে বহু মাদ্রাসা এখন শিক্ষক শূন্য। ঠিক এই সময় মাদ্রাসায় চাকরিতে রত ৫৪৭ জন শিক্ষককে অবৈধভাবে নিয়োগ হয়েছে বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি। বিশেষজ্ঞ কমিটির তদন্তের জানা গিয়েছে, কয়েকশো চাকরিপ্রার্থীকে অবৈধ নিয়োগপত্র দিয়ে দেওয়া হয়। এই বেনিয়ম ধরা পড়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের অভ্যন্তরীণ সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট ৫৪৭টি অবৈধ নিয়োগপত্র ধরা পড়েছে। বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে আরও তদন্ত চলেছে। তদন্ত শেষ হলে আরও শিক্ষক অবৈধভাবে নিয়োগের বিষয় ধরা পড়তে পারে বলে মনে করছে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশানুসারে ওই কমিটি রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেবে। রাজ্য সরকার তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
সূত্রের খবর, কয়েক বছর ধরে পড়িয়ে বা অশিক্ষক কর্মী হিসেবে কাজ করে ঠিকমতো বেতন পাননি, এমন দাবি তুলে ৯০০-র মতো আবেদনপত্র আসে দফতরে। আবেদনপত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় ‘নিয়োগপত্র’ও। এ নিয়ে সন্দেহ হওয়াতেই শুরু হয় তদন্ত। ক্রমশ সন্দেহ দৃঢ় হয়, এই দাবির পিছনে কোনও দুর্নীতি চক্র কাজ করছে। ওই ৯০০ জনের মধ্যে ৫৪৭টি নিয়োগপত্র ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখেছে সুপ্রিম কোর্টের তৈরি করে দেওয়া বিশেষজ্ঞ কমিটি। এবং ৫৪৭টি নিয়োগপত্রই অবৈধ প্রমাণিত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কিছু দিনের মধ্যেই এই বিষয়ে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক রিপোর্ট জমা পড়বে। এই চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির প্রভাবশালীরাও কেউ কেউ জড়িত বলেও সন্দেহ। আবিদ বলেন, ‘এই সব জাল নিয়োগপত্র মান্যতা পেয়ে গেলে সরকারকে বকেয়া বেতন বাবদ ৪০০ কোটি টাকা তো দিতে হতই, সঙ্গে বাড়তি আরও ৩০ কোটি টাকা করে বেতন হিসেবে খরচ হত প্রতি বছর।’
আরও অভিযোগ, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাদ্রাসাগুলিতে অন্তত কয়েকশো প্রার্থীকে ব্যাকডেটে নিয়োগ করা হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের অভিযোগ। যদিও নিয়োগকর্তাদের বক্তব্য, তাঁরা সব নিয়ম মেনেই কাজ করেছেন। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, নিয়োগের ক্ষেত্রে বহু ধরনের বেনিয়ম হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগের জন্য দরখাস্ত চেয়ে অন্তত দু’টি প্রথম শ্রেণির সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিতে হবে, সেই নিয়ম মানা হয়নি। চেনা-পরিচিত এবং আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে থেকে বেশ কিছু নিয়োগ করা হয়েছে বলেও রাজ্য সরকারের অভিযোগ। কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগপত্রের সইও জাল বলে ধরা পড়েছে বলে জানানো হয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর সূত্রে। মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সচিবের জাল সই ব্যবহার করে নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর বেশ কয়েকটি এফআইআর-ও করেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের ডিরেক্টর অফ মাদ্রাসা এডুকেশন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর থানার এমন তিনটি ঘটনা নিয়ে ২০২২ সালে সিআইডি তদন্তও শুরু হয়েছে।
এই বিষয়ে ডিরেক্টর অফ মাদ্রাসা এডুকেশন আবিদ হোসেন এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। একইসঙ্গে জানিয়েছেন, এমন আরও বেশ কিছু অবৈধ নিয়োগপত্র ধরা পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। আবিদ জানান, ‘যেটুকু ধরা পড়েছে, তার ফলে রাজ্য সরকারের বহু কোটি টাকার ক্ষতি আটকানো সম্ভব হয়েছে। এই সব জাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারে যদি চাকরি হয়ে যেত, তা হলে রাজ্যকে এখনই প্রায় ৪০০ কোটি টাকার দায় নিতে হত।’
এ দিকে মাদ্রাসাগুলিতে বেনিয়মে চাকরিতে নিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষক সংকট দেখা দেওয়ার ফলে একাধিক শিক্ষক সংগঠন নিয়োগের দাবি জানিয়েছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কাছে। ইতিমধ্যে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ১৭২৯ শূন্যপদে নিয়োগের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।