পারিজাত মোল্লা: চলতি পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে একের পর এক মামলা কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল হয়েছে এবং হচ্ছে।কখনো বিরোধী দল হিসাবে বিজেপি আবার কখনো বা প্রদেশ কংগ্রেস মামলার পথে গেছে।এবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিজেই মামলাকারী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলো কলকাতা হাইকোর্টে।জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের । হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছে । চলতি সপ্তাহেই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে ।
কোন অধিকারে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ? এই প্রশ্নে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সাব্যসাচী ভট্টাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন । এ নিয়ে মামলা দায়ের করার অনুমতি চাওয়া হলে, বিচারপতি তা মঞ্জুর করেছেন । পাশাপাশি, জরুরি ভিত্তিতে এই মামলার শুনানির আবেদনও করা হয়েছে । চলতি সপ্তাহেই শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে ।প্রসঙ্গত, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ডিরেক্টর জেনারেল এই মুহূর্তে রাজ্য রয়েছেন । পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা? তা নজর রাখার জন্য তিনি নিজে রাজ্যের সব জেলা পরিদর্শন করবেন । ভোটপর্ব চলাকালীন তিনি রাজ্যে থেকে পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখবেন । জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা কমিশনের ডিরেক্টর জেনারেল রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে স্পর্শকাতর কেন্দ্র চিহ্নিত করবেন ।মানবাধিকার কমিশনের ডিরেক্টর জেনারেল পূর্ণ সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে । আর ডিরেক্টর জেনারেলের নির্দেশ মতো কোথায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ? তা দু’সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে । মানবাধিকার কমিশন দাবি করেছে এই পুরো সিদ্ধান্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই নাকি নেওয়া হয়েছে ।কিন্তু, রাজ্য নির্বাচন কমিশন তা স্বীকার করে নি ।
তারা কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়েছে, -‘ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা না করেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তাদের ডিরেক্ট জেনারেলকে পর্যবেক্ষক করে পাঠিয়ে দিয়েছে’ । যা সম্পূর্ণ আইন বিরুদ্ধে বলে এ দিন আদালতে জানিয়েছেন কমিশনের আইনজীবী । রাজ্য নির্বাচন কমিশন , “কীভাবে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের উদ্যোগে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ? এটা কি তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে ? আইন অনুযায়ী রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ সংস্থা ।”
কমিশন আরও জানিয়েছে,-‘ রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র সংস্থা হিসেবে যতক্ষণ না সাহায্য চাইছে, ততক্ষণ কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থারই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢোকার অধিকার নেই’ । বিচারপতি সাব্যসাচী ভট্টাচার্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন । এই সপ্তাহেই মামলার শুনানি হবে ।আদালতের কাছে তাদের প্রশ্ন, -‘ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কি আদৌ রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপর নজরদারি চালানোর এক্তিয়ার রয়েছে? জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কি এ ব্যাপারে অতিসক্রিয়তা দেখাচ্ছে? ‘ হাইকোর্টের কাছে জানতে চেয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এদিন একাধিক প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
গত বৃহস্পতিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নয়া কমিশনার রাজীব সিনহা। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দিন অর্থাত্ ৯ জুন থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন পর্ব। চলবে বৃহস্পতিবার ১৫ জুন পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের রূপ নিয়েছে বিভিন্ন এলাকা। মনোনয়ন পর্বে এই অশান্তির আবহেই স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষপ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এই পদক্ষেপকে অতিসক্রিয়তা বলে মন্তব্য করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাঁদের যুক্তি, একটি স্বাধীন সংস্থার কাজের উপর অন্য স্বাধীন সংস্থা কখনও নজরদারি চালাতে পারে না। চলতি সপ্তাহেই এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে ।