কৌশিক সালুই, বীরভূম:- অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রম পৌঁছে দিয়েছে সাফল্যের শীর্ষে। নিট প্রবেশিকা পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে জেনারেল ক্যাটাগরিতে ১৩৪তম স্থান দখল করে নিয়েছে বীরভূমের এক অখ্যাত গ্রামের পড়ুয়া মুহাম্মদ রেজাউল্লাহ্। বাড়ি সিউড়ি থানার ছোট আলুন্দা গ্রামে। স্থানীয় ইটাগড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সে পড়াশোনা করেছে। তার এই নজরকাড়া ফলাফলে গর্বিত সকলেই। স্বভাবতই রেজাউল্লাহর মা রাবেয়া খাতুন, বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, স্কুলের শিক্ষকরা সবাই খুশি।
নিট পরীক্ষায় মোট ৭২০ নম্বরের মধ্যে ৭০৫ পেয়েছে রেজাউল্লাহ। এ ছাড়াও সদ্য প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪৭০ নম্বর পেয়েছিল সে। গৃহশিক্ষক ছাড়াই দিনে সাত থেকে আট ঘণ্টা পড়াশোনা করত। এর পাশাপাশি স্কুলের শিক্ষকরা তাকে সব সময় প্রয়োজনমতো সহায়তা করেছেন। বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জেলাশাসক দফতরের কর্মচারী, মা রাবেয়া খাতুন গৃহবধূ এবং দাদা মুহাম্মদ রিয়াসাতুল্লাহ পদার্থবিদায় স্নাতক হয়ে বিভিন্ন ধরনের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাবরের মেধাবী রেজাউল্লাহ। ক্লাস সিক্সে যখন পড়াশোনা করত তখনই সে উচ্চমাধ্যমিকের অঙ্ক করে দিতে পারতো। স্কুলের শিক্ষকরা তার এই সাফল্যে মোটেই অবাক নন। কারণ, তাঁরা জানতেন তাঁদের ছাত্র অবশ্যই সাফল্যের শীর্ষ পর্যায়ে থাকবে। বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘ছেলে পড়াশোনা ছাড়া কিছু ভাবত না। তার বাইরে ওর অন্য কিছু নেশাও ছিল না। ও প্রথম থেকেই অন্যান্য ছেলেদের থেকে অনেকটাই আলাদা। ছেলে ভালো কিছু করবে, সেটা জানতাম। কিন্তু এত ভালো করবে সেটা আশা করিনি।’
ইটাগড়িয়া স্কুলের প্রধানশিক্ষক শেখ একরামুল হক বলেন, ‘আমরা ওর এই সাফল্যে মোটেই অবাক নই। কারণ, জানতাম আমাদের ছাত্র অবশ্যই দারুণ কিছু একটা করবে এবং সে সেটা করে দেখিয়েছে।’
নিট কৃতী মুহাম্মদ রেজাউল্লাহ বলে, ‘নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে রেখে গৃহশিক্ষক ছাড়াই নিয়মিত কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে স্কুলের শিক্ষকদের সহায়তায় আজকে আমি এই সাফল্য পেয়েছি। একাদশ শ্রেণি থেকে দু’বছর এই নিট প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য একটি অনলাইন কোচিং করেছিলাম। আর বাকিটা নিজে এবং স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকেই পেয়েছি। যারা ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে চায়, সেই সমস্ত পড়ুয়াকে বলব, কঠোর পরিশ্রম এবং নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূর রেখে ইন্টারনেটকে সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সাফল্যে পৌঁছনো যাবে।’
রেজাউল্লাহ-র বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ টেলিফোনে পুবের কলম-কে বলেন, আমার ছেলে অনলাইন কোচিং গ্রহণ করা ছাড়া আর অন্য কোথাও কোচিং নেওয়ার জন্য ভর্তি হয়নি। তবে মাঝেমধ্যে সে বোলপুরে গিয়ে অ্যালেনের পরীক্ষাগুলিতে অংশ নিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই ধর্মের প্রতি তার অনুরাগ রয়েছে। অনলাইনে দিল্লির যে সংস্থা ফিজিক্সওয়ালার কাছ থেকে সে কোচিং নিত, তারা তাকে দিল্লি নিয়ে গেছে। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই আমার ছেলে বাংলায় ফিরে আসবে। কোন মেডিক্যাল কলেজে রেজাউল্লাহ পড়ার সুযোগ পাবে, তা নিয়ে এখন আমরা ভাবনায় রয়েছি।