পারিজাত মোল্লা: ইতিপূর্বে রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মামলা করেছেন। যেখানে রাজ্যপাল এবং রাজ্য কে মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়েছে। বুধবার উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যের সার্চ কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে।
এই মামলাটি করেছেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।সম্ভবত ১২ জুন এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে। পাঁচজন সদস্যের মধ্যে কেন রাজ্যের তিনজন প্রতিনিধি কেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে। তাঁর পরিবর্তে জায়গা পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি। এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার।আগে উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটিতে থাকতেন তিন সদস্য। নিয়ম বদলে পাঁচ সদস্য করা হয়েছে।
পাঁচজনের কমিটির সদস্য হিসেবে থাকছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র একজন প্রতিনিধি, রাজ্যপাল তথা আচার্যের প্রতিনিধি, উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধি, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ও মুখ্যমন্ত্রীর একজন প্রতিনিধি।রাজ্যের তিনজন প্রতিনিধি কেন?
এই প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ইউজিসি-র চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে সার্চ কমিটিতে। এরফলে সদস্য সংখ্যা ৩ থেকে বেড়ে ৪ হয়ে যাচ্ছিল। কোনও নির্বাচন কমিটিতেই জোড় সংখ্যক সদস্য সংখ্যা থাকা বাঞ্ছনীয় নয় বলে দাবি করেছিলেন শিক্ষামূলক। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রীর একজন প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য। রাজ্যপালের সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শিক্ষা দফতরকে না জানিয়ে কেন, এই নিয়োগ, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।হয়েছে মামলাও।বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যের তৈরি করা নতুন আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হল কলকাতা হাইকোর্টে। এই মামলার শুনানি হতে পারে ১২ জুন।
এই মামলা দায়ের হয়েছে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। আগামী ১২ জুন এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, -‘উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আইন পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট’ । হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, -‘উপাচার্য নিয়োগের কমিটিতে সর্বাধিক সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্যদের রাখতে হবে’ । কিন্তু রাজ্য সেই নির্দেশ মানেনি বলে অভিযোগ ।মামলাকারীর আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্তের অভিযোগ, -‘ নতুন আইনে উপাচার্য নিয়োগের কমিটিতে ৫ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন রাজ্যের প্রতিনিধি । বাকি দু-জনের ১ জন আচার্য (রাজ্যপাল ) ও অন্যজন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি । কী করে কমিটিতে রাজ্যের ৩ জন প্রতিনিধি থাকতে পারেন, সেই প্রশ্ন তুলে মামলা দায়ের করেন তিনি । ইতিপূর্বে রাজ্যের ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই রাজ্যপাল নিজের পছন্দ মতো ব্যক্তিদের নিয়োগ করেছেন বলে দাবি করে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ।উল্লেখ্য, কলকাতা হাইকোর্টের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ গত মার্চ মাসে এক নির্দেশে রাজ্যের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ অবৈধ বলে রায় দিয়েছিল । কারণ উপাচার্য নিয়োগের ব্যাপারে রাজ্যের সিদ্ধান্ত নয়, বরং রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানানো হয় । কিন্তু রাজ্যপালের সঙ্গে এই বিষয়ে কোনও আলোচনা না করে রাজ্য সরকার ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেছিল বলে জানায় হাইকোর্ট। এর ফলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর আর রাজ্যপালের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয় ।
সম্প্রতি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেই উপচার্য নিয়োগ করলে, তার বিরুদ্ধে সরব হয় রাজ্য সরকার ।তা নিয়ে এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মামলা করেছেন। উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত দুটি মামলা দাখিল হলো কলকাতা হাইকোর্টে।এখনও অবধি কোন নির্দেশ জারি করা হয়নি আদালতের তরফে।