কৌশিক সালুই বীরভূম- উচ্চ আদালতের নির্দেশে পশ্চিমবাংলায় বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনায় সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে।খুনের ঘটনায় তদন্ত করতে শনিবার বীরভূমের কাঁকরতলা থানার পারসুনডি গ্রাম পঞ্চায়েতের নবসন গ্রামে এলো সিবিআই। দুই মহিলা সহ প্রায় ১৫ জন সিবিআই আধিকারিক এদিনের তদন্তে আসেন। কথা বলেন কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক এর সঙ্গে। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা। যদিও অনেক গ্রামবাসী ঐদিনের খুনের ঘটনাকে অরাজনৈতিক বলে সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছেন।
জামিনে মুক্ত হয়ে মিঠুন বাগদি বাড়ি ফেরার কয়েকদিন পর খুন হয়েছিল গত ১২ জুন সন্ধ্যায়। সেই ঘটনায় রাজনৈতিক রঙ লাগে পরবর্তী সময়ে। এদিন সিবিআই নবসন গ্রামে সেই ঘটনার তদন্ত করতে আসে। সেই তদন্তকারী দল কাঁকরতলা থানা ওসি জাইদুল ইসলাম, সি আই দুবরাজপুর আস্তিক মুখার্জি এবং খুনের ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে সেদিনের বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
পুলিশের আধিকারিকেরা কোথায় এবং কিভাবে মিঠুনের মৃতদেহ পড়ে ছিল সেটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করে দেখান। পাশাপাশি সিবিআই আধিকারিকেরা স্থানীয় কিছু মানুষ জনের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে সে মিঠুনকে কিভাবে কুপিয়ে থেতলে মারা হয়েছে, কোথায় পড়েছিল সেই সময় জল চাইলেও কেউ তাকে জল দিয়ে সাহায্য করেন সেসব তথ্য সিবিআই আধিকারিকদের জানান তারা। পাশাপাশি অনেকে এও বলেন ওই ঘটনা কোন রাজনৈতিক ঘটনা নয় মৃত ব্যক্তি বিজেপি কর্মী এবং যারা মেরেছিল তারা তৃণমূল সমর্থক হলেও পূর্ববর্তী একটি খুনের ঘটনার আক্রোশ থেকেই সেদিনের খুন সেটাও জানিয়ে দেন তারা। ওই সিবিআই আধিকারিকের দল মিঠুনের তালাবন্ধ বাড়ি ঘুরে দেখেন। তার পরিবার বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর এ থাকেন বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত মিঠুন বাগদি খয়রাশোল গ্রামীণ মন্ডল এর সহ-সভাপতি ছিলেন। অভিযোগ ঘটনার সন্ধ্যায় একদল দুষ্কৃতী তার বাড়িতে হামলা করে কুপিয়ে এবং পাথর দিয়ে থেতলে খুন করে তাকে। বিজেপির অভিযোগ ছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পরিকল্পনা খুন করেছে তাকে। যদিও সেই সময় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং পুলিশের দাবি ছিল ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোন যোগ নেই পূর্ব আক্রোশে এই পাল্টা খুনের ঘটনা। গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছিল মিঠুনের খুনের ঘটনার মাস ছয়েক আগে তার গাড়ির ধাক্কায় গ্রামের রাজু বাগদি এক যুবক মারা যায়। মৃত ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগ মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই ধাক্কা মারা হয়েছিল। সেই সময় ওই পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে মিঠুনকে গ্রেপ্তার করে।উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ৫ জুন জামিনে মুক্ত হয়। ঘটনার পর মিঠুন সহ তার পরিবার গ্রামছাড়া হয়েছিল। ১২ই জুন ঘটনার দিন সকলে তারা বাড়ি ফিরে ছিল।
বাড়ি ফিরতেই রাজুর পরিবার মিঠুন ও তার পরিবারের উপর হামলা করে বলে অভিযোগ। হামলার সময় বাকি সকল লোকজন পালাতে সক্ষম হলেও মিঠুন পালাতে পারেনি আক্রমণকারীদের হাত থেকে। আক্রমণকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পাথর দিয়ে থেতলে দেয় মিঠুনকে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। র এই ঘটনায় মিঠুনের নিকট আত্মীয় কার্তিক বাগদির অভিযোগের ভিত্তিতে কাঁকড়তলা থানার পুলিশ লক্ষী বাগদি, কল্পনা বাগদি, সুন্দরা বাগদি, প্রতিমা বাগদি এবং অনিল বাগদি কে গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা হলেন স্ত্রী, দাদা, বৌদি এবং দিদি রাজুর সম্পর্কে। পরবর্তী সময়ে বিজেপির পক্ষ থেকে বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ঘটনায় উচ্চ আদালতে সিবিআই তদন্ত দাবি করা হয়েছিল উচ্চ আদালত সেই দাবি মঞ্জুর করলে সিবিআই রাজ্যজুড়ে তদন্ত শুরু করে। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বহু তৃণমূল কর্মী খুন হলেও সেই সমস্ত ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কোন তদন্ত নেই। অরাজনৈতিক হলেও খুনের ঘটনায় বিজেপি পরবর্তী সময়ে সেটার রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি করে এবং উচ্চ আদালত সেই দাবি কে সমর্থন করে। গত ৭ ই মে খয়রাশোল থানার মুক্তিনগর গ্রামে কান্ত বাউরী নামে এক তৃণমূল কর্মী খুন হন। যদিও সেই ঘটনায় কোনো কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এদিকে সিবিআই আধিকারিকরা সংবাদমাধ্যমের কাছে কোন ভাবেই মুখ খোলেননি। এদিন সেদিনের ঘটনার কথা সিবিআই আধিকারিকদের বলেন নীলিমা বাগদি নামে মিঠুনের এক প্রতিবেশী । তিনি বলেন কিভাবে মিঠুন কে মারা হয়েছিল সেই ঘটনা তিনি তদন্তকারী অফিসারদের কে জানিয়েছেন”।