পারিজাত মোল্লা: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর আইআইটির মৃত ছাত্রের দেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের নির্দেশ কার্যকর না করায় কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মুখে তদন্তকারি অফিসার।
গত ২৫ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নির্দেশে দেন, এক মাসের মধ্যে অসম পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে সেখানে কবরে রাখা মৃত ছাত্রের দেহ এনে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে’।তবে এখনও অবধি রাজ্য পুলিশ আসাম পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ পর্যন্ত করেনি।
মৃতের পরিবার হাইকোর্টের নির্দেশ দেখালেও অসম পুলিশ জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যোগাযোগ না করায় তারা কিছু করতে পারছে না’। আগামী শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত , গত ১৪ অক্টোবর আইআইটি খড়্গপুরের একটি ঘর থেকে ফায়জান আহমেদের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয়। এরপরেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে খড়গপুর টাউন থানার পুলিশ। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তার দেহটি পাঠানো হয় ময়না তদন্তের জন্য। তার পরেই হাসপাতালে এসে ছেলের খুনের অভিযোগ করেন ফায়জানের পরিবার। যদিও প্রথমে তাঁর পরিবার মৃতদেহটি চিনতে না পেরে ফায়জান বলে অস্বীকার করেছিলেন।
কিন্তু পরে তাঁরা দেহটি শনাক্ত করে থাকে। আইআইটি খড়গপুরের মৃত ছাত্র ফাইজন আহমেদের দেহের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তা সত্ত্বেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে নিহতের পরিবারের অভিযোগ।
তাই এবার আদালত অবমাননার অভিযোগ উঠল তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে। আইআইটি খড়্গপুরের ছাত্রের রহস্যমৃত্যুতে গত ২৫ এপ্রিলই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, ফাইজন আহমেদের দেহ কবর থেকে তুলে ফের ময়নাতদন্ত করতে হবে’।
হাইকোর্ট তার আগে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। সেই কমিটির মাথায় ছিলেন চিকিত্সক অজয় গুপ্তা। চিকিত্সক অজয় গুপ্তর দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই ছাত্রের মাথার পিছনে ভারী কিছু বস্তু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশের ময়না তদন্তের রিপোর্টে তার উল্লেখ নেই।
বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টেও উল্লেখ ছিল, হাতে কেটে দিয়ে আত্মহত্যার দিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হয়ে থাকতে পারে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখেই দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।
রাজ্যের আইনজীবী এদিন আদালতে সওয়াল করেন, -‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া ২০২২ সালের ২১ নভেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আইও অর্থাত্ তদন্তকারী অফিসার কিছু ওষুধ উদ্ধার করেন। সেই ওষুধগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়। সেই ওষুধগুলো মূলত মাংস যাতে পচে না যায়, তার জন্য ব্যবহার হয়। বিষ হিসাবে ব্যবহার হয়’।
রিপোর্টে নতুন করে দেহ তুলে নতুন করে ময়নাতদন্তের সুপারিশ করেছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। কমিটি প্রশ্ন তোলে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কীভাবে ভারী বস্তুর আঘাতের কথা উল্লেখ না থাকতে পারে? কারণ মাথার পিছনে ‘হেমাটোমা’ অর্থাত্ রক্ত জমাটের চিহ্ন স্পষ্ট। তিনি দাবি করেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ঠিক নেই।
এরপর বিচারপতি মান্থার জানিয়েছিলেন, -‘ত্রুটিপূর্ণ ময়নাতদন্ত হয়েছে। তাই দ্বিতীয়বার ভাবতে হচ্ছে’। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য সেই ছাত্রের দেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেন বিচারপতি। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, রাজ্যের পুলিশ একেবারেই অসম পুলিশের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। এর ফলে এখনও দেহ কবর থেকে তোলার ব্যাপারে কোনও সক্রিয় পদক্ষেপই করা হয়নি। পরিবারের তরফ থেকে আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়।
আগামী শুক্রবার আদালত অবমাননার শুনানি রয়েছে বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের সিঙ্গেল বেঞ্চে।