পারিজাত মোল্লা: গরু পাচার মামলা থেকে রাজু ঝাঁ খুনে অন্যতম চরিত্র বীরভূমের ইলামবাজারের আব্দুল লতিফ। শনিবার সকালবেলায় ভিন্ন ছদ্মবেশে আসানসোল আদালতে হাজিরা দিলেন তিনি। তবে এক আইনজীবীর মৃত্যুতে লতিফের হাজিরা রেকর্ড হল, কিন্তু শুনানি সর্বপরি কোন নির্দেশ জারি করা হয় নি আসানসোল সিবিআই এজলাসের তরফে।
সুপ্রিম কোর্টের অর্ডার কপির রেশ ধরে আসানসোল সিবিআই আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্ত রয়েছেন লতিফ। ২৭ এপ্রিল তিনি আসানসোল এসেছিলেন। ওইদিন জামিন পান। পরবর্তী শুনানি ছিল ৬ মে অর্থাত্ শনিবার ছিল। সেই মতো সকাল ৬ টার আগেই লতিফ তার ঘনিষ্ঠদের নিয়ে আসানসোল আদালতে ঢুকেন। মুখে দাঁড়ি। মাস্ক লাগিয়ে এদিন আদালতে ঢোকেন তিনি।
গত ২৭ এপ্রিল গরু পাচার মামলার তদন্তকারী আধিকারিক সুশান্ত ভট্টাচার্য ওইদিন বিচারককে জানান -‘তাঁরা লতিফকে আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। নতুন তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান এবং সহযোগিতা আশা করবেন’।
লতিফের আইনজীবী ওইদিন বলেছিলেন, ‘আমরা তো সহযোগিতা করতেই রাজি। প্রয়োজনে এখন থেকেই সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন বা সঙ্গেও নিয়ে যেতে পারেন।’ যদিও সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় আগামী ৪ মে পর্যন্ত সুরক্ষাকবচে আছেন লতিফ।তাই তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে লতিফকে।
দু’পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল জবাবের পর আসানসোল সিবিআই এজলাসের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ৬ মে পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন। বিচারক নির্দেশ দেন ৩ দিন পরপর তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করতে হবে। পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে। এই সময় গরু পাচার মামলায় তার নাম জুড়ে যায়। গতবারের শুনানি শেষে শর্তসাপেক্ষে ১৫ হাজার টাকা জমা রাখার বিনিময়ে জামিন পান আব্দুল লতিফ।গরু পাচার মামলার তদন্তকারী আধিকারিক সুশান্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হয়। এবং জানতে চান ওইদিনই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা?
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের আইও সুশান্ত ভট্টাচার্য লতিফকে জানান ইসিএল সাতগ্রাম এরিয়ার গেস্ট হাউসে বেলা একটার সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেইমতো আদালত থেকে লতিফ বেরিয়ে যান জামুরিয়া ইসিএল সাতগ্রাম গেস্টহাউসে। সিবিআইয়ের মুখোমুখি হন। এরপর ২৭ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত সিবিআই জেরার মুখে পড়েন তিনি। জামিনে মুক্ত থাকা লতিফকে এখনও রাজু ঝা হত্যামামলায় সিট বা বর্ধমান পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি।
আবার গরু পাচার মামলায় ইডি’র যে চার্জশিট রয়েছে, তাতে নাম রয়েছে আব্দুল লতিফের। এর ফলে সিবিআইয়ের হাত থেকে সাময়িক স্বস্তি পেলেও ইডির তলবের অপেক্ষায় গরু পাচার মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ।আগামী ৮ মে ফের আসানসোল সিবিআই আদালতে হাজিরা দিতে হবে তাঁকে। সেদিনই তাঁর মামলার শুনানি হবে। মাঝের দু’দিনের জন্য ২৭ এপ্রিল দেওয়া আদালতের শর্ত সাপেক্ষে জামিনের নির্দেশই বহাল থাকবে। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে রক্ষাকবচ নিয়ে এসেছেন গরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল লতিফ। সেই রক্ষাকবচের মেয়াদ ৪ মে পর্যন্ত ছিল। তবে সেদিন মামলার শুনানি না হওয়ায় রক্ষাকবচের নির্দেশ বহাল থাকে। একইসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট রক্ষাকবচ দেওয়ার সময়ই বলেছিল, ২৭ এপ্রিলের মধ্যে আসানসোল সিবিআই আদালতে হাজিরা দিতে হবে লতিফকে। সেইমতো সুপ্রিম-কবচ নিয়ে ২৭ এপ্রিল আসানসোল সিবিআই আদালতে হাজিরা দেন লতিফ। জামিনের আবেদন করেন। সেই আবেদন মঞ্জুরও হয় শর্তসাপেক্ষে। ৬ তারিখ অর্থাত্ শনিবার পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ ছিল। শর্ত ছিল ৩ দিন পর পর সিবিআইয়ের কাছে যেতে হবে। সেই হাজিরাও তিনি দেন। শনিবার সকাল ৬টার আগেই লতিফ দলবল নিয়ে আদালতে ঢুকে পড়েন। মুখে মাস্কের আড়াল ছিল।