শুভজিৎ দেবনাথ, ডুয়ার্স: রাতের অন্ধকারে বাগান ছেড়ে পালালো চা-বাগান কর্তৃপক্ষ। কর্মহীন হয়ে পড়ল প্রায় ১১৭৬ জন শ্রমিক। কারখানা গেটে বিক্ষোভ শ্রমিকদের। পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে বন্ধ হয়ে গেল ডুয়ার্সের বানারহাট ব্লকের দেবপাড়া চা বাগান।
প্রতিদিনের মতো ভোর ছ’টায় সাইরেন বাজেনি কারখানায়। তবে ততক্ষণে কাজে বেরোনোর জন্য প্রস্তুত শ্রমিকরা। কিন্তু নিয়মমাফিক সাইরেন বাজলোনা কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কারখানার গেটের সামনে যেতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে চা শ্রমিকদের। দেখা যায় কারখানা বন্ধ করে চলে গেছে মালিকপক্ষ।
ডুয়ার্সের চা বলয়ের মানুষ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোন দিকে থাকবেন তা নির্বাচনের ফলাফলের পর জানা যাবে। যদিও যুযুধান দুই পক্ষ বিজেপি ও তৃণমূল এই চা বলয়ের মানুষের মন পেতে একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসাথে দুই পক্ষই বোঝানোর চেষ্টা করছে তারা চা বলয়ের মানুষের জন্য কাজ করছেন। আর ঠিক সেসময় ডুয়ার্সের বানারহাট ব্লকের দেবপাড়া চা বাগান বন্ধ হয়ে গেল। এই নিয়ে গত চার বছরে তিনবার বাগান বন্ধ হল।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই বাগানে সমস্যা চলছিল। বাগান ঠিকমতো পরিচর্যা করা হচ্ছিল না। প্রতিদিনের মতো শনিবারও বাগানে কাজে যোগ দেবেন বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শ্রমিকরা। কিন্তু প্রতিদিনের মতো এদিন বাগান থেকে কোনও সাড়া শব্দ না পেয়ে শ্রমিকরা ফ্যাক্টরিতে গিয়ে দেখেন কেউ নেই, স্বাভাবিকভাবে শ্রমিকরা বুঝতে পারেন যে বাগান বন্ধ করে চলে গিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ।
খবর পেয়ে বাগানে আসেন তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন জেলা সভাপতি রাজেশ লাকড়া। তিনি বলেন, বাগান খোলার জন্য শ্রমিকদের সাথে লাগাতার আন্দোলনে নামা হবে। এভাবে বাগান বন্ধ করে চলে যাওয়া শ্রমিকদের বিপদে ফেলে আমরা মেনে নিবো না। প্রয়োজনে বাগান মালিকের বাড়ির সামনে ধর্নায় বসবো। আমরা বাগান খোলার পক্ষে। আমরা সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। শ্রমিকদের জন্য যা করার দরকার তাই করবে সংগঠন।
এই বিষয়ে শ্রমিকদের বক্তব্য বাগান ঠিকমতো পরিচর্যা না করায় পাতা কম এসেছিল মালিকপক্ষ লোকসানের ভয়ে বাগান বন্ধ করে দেয়। শ্রমিকরা জানিয়েছে কোনও আন্দোলনের জন্য বাগান বন্ধ হয়নি এই বাগান বন্ধ হয়েছে মালিকপক্ষের গাফিলতির জন্য। বাগান খোলার বিষয়ে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করবে এই আশায় বসে রয়েছেন চা বাগানের শ্রমিকরা।
চা- শ্রমিক রিতা এক্কা বলেন, কোনও রকম আন্দোলন বিশৃঙ্খল পরিবেশ হয়নি, তার পড়েও বাগান কর্তৃপক্ষ এভাবে ছেড়ে চলে গেল। আজকে সকালে যখন সাইরেন শুনতে পাইনি। কাজে যাওয়ার জন্যে রেডি হলে ফ্যাক্টরির সামনে গিয়ে গেটে তালা ঝোলানো অবস্থায় দেখি। আমাদের মতন গরীব মানুষদের খুবই বিপদে পড়বে। বিনা কারণে মালিক বাগান বন্ধ করে চলে গিয়েছে আমরা চাই তাড়াতাড়ি বাগান খুলুক।
বি.সি.ডাব্লিউ নেতা পশুরাম গোয়ালা বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষ নিজেদের গাফিলতির জন্যেই এভাবে বাগান বন্ধ করে চলে গিয়েছে। বাগানের পাতি ভালো এসেছিলো প্রথমবার। দ্বিতীয় পাতি আসার আগে গাছে ওষুধ স্প্রে গাছের পরিচর্যা বাগান কর্তৃপক্ষ সেভাবে করেনি যার কারণে পাতি কম হয়েছে। লস হবে এই চিন্তাভাবনা করেই হয়ত মালিক বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছে।