পুবের কলম প্রতিবেদক: একদিকে যখন কালিয়াগঞ্জে মারমুখী জনতার ভয়ঙ্কর রূপ ফুটে উঠল পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আর রাজ্য-রাজনীতি সেই ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত থাকল, ঠিক সেই সময় এক অন্যচিত্র ধরা পড়ল মালদায়।
‘আইনের রক্ষক’ নিজের জীবন বিপন্ন করে পণবন্দি স্কুল পড়ুয়াদের বাঁচালেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সাহসী পুলিশ অফিসার ডিএসপি আজহারউদ্দিন খানের ছবি। বুধবার মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে অতর্কিতে ঢুকে পড়ে এক বন্দুকধারী। অত্যন্ত কৌশলে সাংবাদিক সেজে বন্দুকধারীর সঙ্গে সুচতুরভাবে কথা বলে তাকে নিরস্ত্র করে পড়ুয়া সহ ক্লাস টিচারকে উদ্ধার করেন ডিএসপি খান। নিজের ডিউটিতে কর্তব্যপরায়ণ ডিএসপি আজহারউদ্দিন খানের প্রশংসায় স্কুল, অভিভাবক সহ গোটা জেলা।
সংবাদ মাধ্যমকে ডিএসপি আজহারউদ্দিন খান জানিয়েছেন, ‘আমার প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ছিল নিরাপদে শিশুগুলিকে উদ্ধার করা। আজ কোনও মা তার সন্তানকে হারিয়ে ফেললে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না’।
প্রসঙ্গত, বুধবার মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে অতর্কিতে হানা দেয় দেব কুমার বল্লভ নামের ওই বন্দুকধারী। সপ্তম শ্রেণিতে ঢুকে পড়ে সে। তখন সেখানে এক শ্রেণী শিক্ষিকা সহ ৭১ জন শিক্ষার্থী বসেছিল। ওই বন্দুকধারী শ্রেণীকক্ষে ঢুকে পড়ে, পড়ুয়া ও ক্লাসটিচারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তার এক হাতে ধরা বন্দুক অন্যহাতে ধরা ছিল একটি কাগজ। স্বাভাবিকভাবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা স্কুলে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি পুলিশকে খবর দেয়। এক মুহূর্ত দেরি না করে, বিশালবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব। তবে অভিযান সহজ ছিল না পুলিশের কাছে। কারণ একদিকে স্কুল পড়ুয়াদের নিরাপত্তা আর অন্যদিকে ওই বন্দুকধারীর মানসিকতার বিচার করেই অভিযানে এগিয়ে যায় পুলিশ। উর্দি পরে এই অভিযান ঝুঁকির কারণ হত, তাই সিভিল ড্রেসে সাংবাদিক সেজে ক্লাসরুমে আসার পরিকল্পনা ফাঁদে পুলিশ। এই পুরো কাণ্ডের নেপথ্যে ছিলেন ডিএসপি আজহারউদ্দিন খান। কলকাতার বাসিন্দা আজহারউদ্দিন বর্তমানে মালদায় কর্মরত।
সাংবাদিক সেজে একটি টি-শার্ট, পায়ে হাওয়াই চপ্পল পরে, সাধারণ পোশাকে ক্লাসে ঢুকে পড়েন আজহারউদ্দিন। বল্লভকে প্রশ্ন করতে থাকেন ছদ্মবেশে থাকা ডিএসপি খান, সেই সব প্রশ্নোত্তর মোবাইলে রেকর্ড হতে থাকে। সাংবাদিক ভেবে গড়গড় করে কথা বলতে থাকে বন্দুকধারী দেব কুমার বল্লভ।
পুলিশের ফাঁদ বুঝে ওঠার আগেই ফের অ্যাকশন শুরু হয় পুলিশের। বল্লভকে চেপে ধরে বন্দুক কেড়ে নেন ডিএসপি আজহারউদ্দিন। তাঁকে সাহায্য করতে ঘরে ঢুকে পড়েন আরও এক সাব-ইন্সপেক্টর। পুলিশ বল্লভকে তাদের হেফাজতে নিয়ে অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। তার কাছে বন্দুক ছাড়াও ছুরি ও পেট্রল বোমা ছিল বলে জানা গেছে। সমস্ত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের শিক্ষক দেবাশিস শীল জানান, খুব আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। কারণ ওই বন্দুকধারী বলছিল তার কাছে বিস্ফোরক আছে। কিন্তু ঠিক সময় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।