পুবের কলম,ওয়েবডেস্ক: এগিয়ে আসছে কর্ণাটক ভোট। সেখানে দলের কোন্দলে চাপে রয়েছে শাসক দল বিজেপি। দাপট বাড়াচ্ছে কংগ্রেসও। পরিস্থিতি যখন এমন তখন কর্ণাটকের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মুসলিম নাম। ২০২২ সালে ভোটার তালিকাতে যেসব মুসলিমদের নাম ছিল, তাদের অনেকের নাম আর নেই। নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি যে তালিকা প্রকাশ করেছে তা থেকেই এই তথ্য স্পষ্ট। এমনটাই জানিয়েছে ‘ভোটারস অ্যাপের’ প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ খালিদ। তিনি বলেন, ‘২০২২ এর জানুয়ারিতে যে ভোটার তালিকা নির্বাচন কমিশন প্রকাশ করেছিল সেই তালিকা আমি ২০২৩ এ ডাউনলোড করেছি। সেখানেই দেখেছি, ২০২২ এ যেসব মুসলিম প্রার্থীর নাম ছিল,তাদের নাম নেই ২০২৩ এর তালিকায়। প্রতিটি নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে প্রায় ৪-৫ হাজার মুসলিম ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।’
কেবল মৌখিক অভিযোগ করে খালিদ দায়িত্ব শেষ করেননি। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এই রিপোর্ট তৈরী করেছেন ‘ভোটারস অ্যাপের’ প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ খালিদ। কোন নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে কতজন করে মুসলিমের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করেছেন তিনি। চিত্তপুরে ৫,৬৮৭ জন মুসলিমের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। শাহাপুরে বাদ দেওয়া হয়েছে ৪,২১৬ জনের নাম। বাসাভা কল্যানে ৫,০৮০, গুলবার্গ গ্রামীণ কেন্দ্রে ৫ ,০০৫ , গুলবার্গা দক্ষিণে ৪ ,৮৫২ , রাইচুর গ্রামীনে ৪ ,৪৭৩, মানভিতে ৫,৪৯৮ , ধারওয়াড় কেন্দ্রে ৪ ,৫৮২, হুবলি ধারওয়াড় নির্বাচনী কেন্দ্রে ৪,৪৪২ , চিত্রদুর্গ কেন্দ্রে ৫ ,৪০৩ , বেল্লারিতে ৪ ,৯১৯ জন, বিজয়নগরে ৪ ,৪৬০, হরিহর কেন্দ্রে ৪,৮৫১, কে.আর. পুরমে ৫,৬০৮, কোলার কেন্দ্রে ৫ ,১৪২ , বেঙ্গালুরু দক্ষিণ কেন্দ্রে ৫,৫০৮ জন, বোমামানাহাল্লি কেন্দ্রের ৪,৬৫৪ এবং রামানগরম নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে ৪,৬২৭ মুসলিম ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই তথ্য সামনে আসার পরও কর্ণাটক নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। কোথায় কত মুসলিমের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তা তালিকা সমেত ইউটিউবে দিয়েও দিয়েছেন খালিদ। ইতিমধ্যেই ভোটার তালিকা থেকে সংখ্যালঘু ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া নিয়ে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়েছে। তাতে অভিযোগ করা হয়েছে যে বেঙ্গালুরুর শিবাজিনগর কেন্দ্রে ৯,১৯৫ জন সংখ্যালঘু এবং দলিতের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
স্মারক লিপিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বেছে বেছে নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ১৯৩ টি বুথের মধ্যে যে ৯১টি বুথের ভোটাদের নাম তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে । যাদের নাম মুছে ফেলা হয়েছে তারা অধিকাংশই সংখ্যালঘু। নাম মুছে দেওয়ার জন্য সেই বুথগুলিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে যেগুলি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত।
ভোটার তালিকা থেকে মুসলিমদের নাম বাদ দেওয়া নিয়ে গত বছর ডিসেম্বর মাসে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও অভিযোগ করা হয়েছিল। সে অভিযোগ সম্পুর্ণ নস্যাত করেন তিনি। মুসলিমদের নাম কেন বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে তা নিয়েও মুখ খোলেন ‘ভোটারস অ্যাপের’ প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলে এই ক্ষেত্রে দুটি সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হয়ত যাদের নাম বাদ পড়েছে তারা ওই এলাকায় এখন আর থাকেন না। কিংবা অন্য কেউ হয়তো নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে বলেছে উক্ত ব্যক্তিরা ওই এলাকায় থাকেন না। ফলে ওই মুসলিম ভোটারদের জিজ্ঞাসা না করেই বেমালুম মুছে দেওয়া হচ্ছে তাদের নাম। অনেকে বলছেন এর পিছনে যে গেরুয়া নকসা রয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। খালিদ বলেন, আমি নিখুতভাবে এই তালিকা বানিয়েছি। এখন দায়িত্ববান নাগরিকদের কর্তব্য নিজেদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।