বিশেষ প্রতিবেদন: ভারতে প্রতি ৪ মিনিটে একজনের স্ট্রোকে মৃত্যু হচ্ছে, এমনটাই রিপোর্ট দিলেন এইমস-এর নিউরো বিশেষজ্ঞরা। এই মুহূর্তে স্ট্রোক দেশে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার মানুষের স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়, যা ভয়াবহ। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে বহু হাসপাতালেই স্ট্রোকের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই।
এই প্রসঙ্গে এইমস-এর নিউরো বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ডাঃ এম ভি পদ্মা শ্রীবাস্তব বলেন, দেশে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় এবং সাধারণ একটি কারণ হল স্ট্রোক। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ভারতে একজন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে আর প্রতি ৪ মিনিটে মৃত্যু।
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজেস (জিবিডি)’র রিপোর্ট অনুসারে স্ট্রোকের ৬৮.৬ শতাংশ ঝুঁকিতে রয়েছে ভারত, মৃত্যুর হার ৭০.৯ শতাংশ ও ৭৭.৭ শতাংশ মানুষ শারীরিক অক্ষমতার শিকার হচ্ছে। এই পরিসংখ্যানগুলি দেশের জন্য আগাম সতর্কতার বার্তা দিচ্ছে। স্ট্রোকে আক্রান্তের সংখ্যা অল্পবয়সী থেকে মধ্য বয়স্কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ২০ বছর বয়সের নিচে স্ট্রোকে আক্রান্তে সংখ্যা ৫.২ মিলিয়ন বা ৫২ লক্ষ। যা ভয়াবহ। সেই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবার অনেক ঘাটতি রয়েছে।
নিউরো বিশেষজ্ঞ ডাঃ এম ভি পদ্মা শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে সমাধান হিসেবে টেলিস্ট্রোক মডেলগুলিকে গ্রহণ করা জরুরি। টেলিমেডিসিন বা টেলিস্ট্রোক মডেল পরিষেবা অনুন্নত পিছিয়ে পড়া জায়গার জন্য একটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
উল্লেখ্য, দেশে বাড়তে থাকা স্ট্রোকের কারণ হিসেবে ধূমপানের অভ্যাস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনের মতো সমস্যাকেই দায়ী করেছেন চিকিৎসকেরা। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ। রক্তচাপের রোগী যারা নিয়মিত ওষুধ ব্যবহার করে না বা কয়েক দিন খেয়ে প্রেশার কমে গেলে ওষুধ বন্ধ করে দেয় বা মনে করে উচ্চরক্তচাপে তার শারীরিক কোনও সমস্যা হচ্ছে না, তাই রক্তচাপের ওষুধ সেবন করে না। কায়িক প্ররিশ্রম কম হলেও তাঁদের এই রোগের ঝুঁকি অন্যদের থেকে বেশি।
স্ট্রোক প্রতিরোধ
১) ধূমপান, মদ্যপান, মাদক দ্রব্য, তামাকদ্রব্য ও জর্দা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হার্টের রোগের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে হবে।
২)চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, শারীরিক ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলে ওজন কমানো, খাদ্যে পশুর চর্বি ও অধিক পরিমাণ লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা। ফাস্টফুড, বাদাম, সন্দেশ-রসগোল্লা, দুধ-ঘি-পোলাও-বিরিয়ানি, চিংড়ি-কাঁকড়া, খাসির মাংস, নারকেল বা নারকেলযুক্ত খাবার ইত্যাদি কম খাওয়া উচিৎ।
৩) শাকসবজি, অল্প ভাত, চিংড়ি-কাঁকড়া বাদে যে কোনও মাছ, মুরগি ও ডিম খেলে কোনও ক্ষতি হয় না। নিয়মিত ব্যায়াম, সকাল-বিকাল হাঁটাচলা করতে হবে এবং অলস জীবনযাপন পরিহার করতে হবে। যতটা সম্ভব দুশ্চিন্তা বা টেনশনমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
স্ট্রোক অবশ্যই একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। তবে একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল, ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। তাই সময় থাকতে সজাগ থাকা জরুরি।