পুবের কলম ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দে এটিএস কমান্ডো সেন্টার স্থাপন করবে উত্তরপ্রদেশ সরকার। বিরোধীরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ‘সাম্প্রদায়িক এবং বিভাজক’ বলে মন্তব্য করেছে। উত্তরপ্রদেশে সাহরানপুর জেলার দেওবন্দে সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (এটিএস) কমান্ডো সেন্টার করা হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের তথ্য উপদেষ্টা শলভ মণি ত্রিপাঠি জানিয়েছেন। কমান্ডো সেন্টার খোলার কাজ যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন– এখানে প্রায় দেড় ডজন স্মার্ট এটিএস অফিসার নিয়োগ করা হবে। দেওবন্দে কমান্ডো সেন্টার চালু করতে রাজ্য সরকার ইউপি এটিএসকে ২–০০০ বর্গমিটার জমি বরাদ্দ করেছে। সূত্র জানায়– এখানে কেন্দ্র কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ দেবে এবং এলিট ফোর্সের জন্য রিফ্রেশার কোর্সও করবে এখান থেকেই।
উল্লেখ্য– রাজধানী দিল্লি থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটারের পথ পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ। যার এক প্রান্তে বিশাল ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে দারুল উলুম মাদ্রাসা। এই মুহুর্তে বিশ্বের নানা দেশের প্রায় হাজার ছয়েক মুসলিম ছাত্র পড়াশুনো করছেন সেখানে। ১৮৬৬র ৩০শে মে দেওবন্দের ছত্তেওয়ালি মসজিদে মাত্র একজন ওস্তাদ ও একজন ছাত্রকে নিয়ে এই মাদ্রাসার জন্ম।
ভারতের তো বটেই– বাংলাদেশ পাকিস্তান আফগানিস্তান মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্য কিংবা ব্রিটেন আমেরিকা দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও ছাত্ররা শিক্ষা নিতে আসেন এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানে। সেদিনের সেই ছোট্ট মাদ্রাসাই আজ মহীরুহের মতো এক বিশাল প্রতিষ্ঠান যার স্বীকৃতি ও সম্মান গোটা ইসলামী বিশ্ব জুড়ে।
দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার সময় মূল ভাবনাটাই ছিল বিশ্বের মাজারে ইসলামী কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে তুলে ধরা আর সে লক্ষ্যে আজও এই প্রতিষ্ঠান একশোভাগ সফল! দারুল উলুম দেওবন্দের মূল দৃষ্টিভঙ্গীটাই হল দ্বীনইমাসলাকের সমস্ত ক্ষেত্রে বা সব বিষযেü মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। মানে বাড়াবাড়িও না– ছাড়াছাড়িও না!
সেই স্বাভাবিকতা বজায় রেখে ইসলামের মূল ধারার যে চিন্তা– দারুল উলুম আজ অবধি সেটাকেই নিষ্ঠাভরে লালনপালন করে এসেছে।
জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত দেওবন্দ কখনও এক পয়সা সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সাহায্য নেয়নি ফিরিয়ে দিয়েছে রাজা বাদশাহদের অনুদানও। দারুল উলুমের প্রতিষ্ঠাতাদের বিধান ছিল সে রকমই। ফলে আজও এই প্রতিষ্ঠান চলে পুরোপুরি সাধারণ মানুষের দানে আর তাদেরই সাহায্যের ভরসায়।
সেই দেওবন্দে এটিএস কমান্ডো সেন্টার স্থাপিত হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক মহল অবাক হয়েছেন। পর্যবেক্ষক মহলের প্রশ্ন– এই সেন্টার দেওবন্দে কেন। অনেকেই এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে চলেছেন।
সুন্নি ধর্মগুরু মাওলানা সুফিয়ান নিজামী বলেন– ইউপি সরকার দেওবন্দে একটি এটিএস কেন্দ্র খোলায় কারও সমস্যা নেই। যাই হোক– তিনি আরও বলেন যে সরকারী সংস্থাগুলিকে অবশ্যই সন্ত্রাসী মামলায় নিরীহ মুসলমানদের সাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। কংগ্রেস মুখপাত্র সুরেন্দ্র রাজপুত এই সিদ্ধান্তের জন্য যোগী সরকারের নিন্দা করেছেন এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশে উন্নয় নের অভাব– বেকারত্ব এবং আখের বকেয়া পরিশোধ না করার মতো বাস্তব সমস্যা থেকে জনগণের মনোযোগ সরানোর চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন। সমাজবাদী পার্টির বিবেক সিলাস এই পদক্ষেপকে সাম্প্রদায়িক এবং বিভাজনকর বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন– সন্ত্রাস সংক্রান্ত গ্রেফতারের অতীতের বেশ কয়েকটি ঘটনা এখানে ঘটেছে। তদন্তে চললেও বিজেপি সরকারের এ নিয়ে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।