পুবের কলম ওয়েবডেস্ক: আবারো রাজ্যপালের ভাষণে নজীর বিহীন গন্ডগোল। বিধানসভার ভেতরে চোর ধরো জেল ভরো স্লোগান। একইসঙ্গে পিসি চোর ভাইপো চোর তৃণমূলের সবাই চোর স্লোগান। বাজেট বিবৃতি পাঠের সময় রাজ্যপালের বক্তব্যের প্রতিবাদে বিরোধীদের এভাবেই প্রতিবাদ দেখলো বাংলার মানুষ। প্রসঙ্গত গত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্যের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের কাছে রাজ্যপালের ভাষণের দিন তার পদের সম্মানের কথা ভেবে শৃঙ্খলা বজায় রাখার আবেদন করেছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিরোধী দল অধ্যক্ষের সেই অনুরোধ তো রাখলই না, উল্টে রাজ্যপাল কে ধিক্কার জানিয়ে স্লোগান শোনা গেল বিজেপি নেতাদের গলায়।
এদিন রাজ্যপালের ভাষণের শুরুতেই অবশ্য পরিস্থিতি এমনটা ছিল না। প্রথমে যখন রাজ্যপাল তার বক্তব্য শুরু করেন সে সময় শান্তই ছিল বিরোধীপক্ষ। একে একে তিনি জ্বী প্রয়াত বিশিষ্ট মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে যখন অষ্টম প্যারা পড়া শুরু করেন তখন থেকেই বিরোধী দলের তরফ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে স্লোগান শাউটিং শুরু করা হয়। নিজের সিটে দাঁড়িয়েই বিজেপি বিধায়কেরা কখনো জয় শ্রীরাম, কখনো পিসি চোর ভাইপো চোর, আবার কখনো আর নেই দরকার তৃণমূলের সরকার স্লোগান দিতে থাকেন। কিন্তু রাজ্যপাল এক মিনিটের জন্যও তার বক্তব্য থামান নেই। প্রবল চিৎকার ও বিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেই তিনি তার ভাষণ চালিয়ে যেতে থাকেন। এই অবস্থায় প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে স্লোগান শাউটিং করার পর অবশেষে বিধানসভা থেকে ওয়াক আউট করেন বিজেপি বিধায়কেরা।
এরপর বিধানসভার পর্টিগোতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের শাসক দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন বিরোধী বিধায়করা। বিরোধী বিধায়কদের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এমনকি সেই স্লোগানে রাজ্যপাল কে ধিক্কার জানানোর পর্যন্ত ছিল। এদিকে রাজ্য পাল বিধানসভায় তার ভাষণ পাঠ শেষ করে বেরোনোর সময়ও যথারীতি বিরোধীদের স্লোগান চলতে থাকে। রাজ্যপালকে বিধানসভার গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিতে এসেছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাদের সামনেই এই স্লোগান ও শাউটিং চলতে থাকে।
রাজ্যপাল গাড়িতে উঠে চলে যাওয়ার সময় বিরোধী বিধায়কদের হাতজোড় করে শুভেচ্ছা বিনিময় করার চেষ্টা করেন। বিরোধী দলের সদস্যরা এদিকে কেয়ার করেননি। বিধানসভা থেকে রাজ্যপাল চলে যাওয়ার পর বিজেপির তরফ থেকে বলা হয় তাদের প্রতিবাদ ব্যক্তি রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নয়। তার মাধ্যমে সরকার পক্ষ যেভাবে অসত্য ভাষণ তাকে দিয়ে পাঠ করিয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিন রাজ্যপালের যে বিরোধিতা করা হয়েছে মূলত এই অসত্য ভাষণ পাঠের কারণেই। বিজেপির তরফ থেকে আরো বলা হয়, আমরা রাজ্যপালের পদকে সম্মান করি। এর বিরুদ্ধে কোন বিরোধিতা করছি না। কিন্তু যেভাবে মানুষের দাবীকে উপেক্ষা করা হলো সেটাই আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। অন্যদিকে এদিনের এই বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে করা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
বিজেপির এই বিশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুনাল ঘোষ জানিয়েছেন,কেন্দ্রের পাঠানো রাজ্যপালের ভাষণের সময় অসভ্যতা করল কেন্দ্রের শাসকদলের মানসিক অবসাদগ্রস্ত বঙ্গ শাখা। নিজেদের কেন্দ্রের পাঠানো রাজ্যপালকেও ছাড়ছে না। হাস্যকর। এতে বিজেপির দেউলিয়া, হতাশার রাজনীতি প্রমাণিত। অতৃপ্ত আত্মার অসহায় আর্তনাদ। গোলমালের চেষ্টা। এটা ওদের ব্যর্থতার নমুনা।