পারিজাত মোল্লা: সমাজের বিভিন্ন পেশার মধ্যে শিক্ষকতা পেশা অন্যান্য পেশার তুলনায় ভিন্ন। পুলিশ থেকে সাংবাদিক, আইনজীবী থেকে বিচারক প্রত্যেকেই শিক্ষাজীবনে শিক্ষকদের সান্নিধ্য পেয়েছেন। শিক্ষকতার কর্মজীবনে অবসর নেওয়ার পর তাঁদের অনেকেরই সম্বল অবসরকালীন বকেয়া অর্থগুলি। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে একদল অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তাঁদের বকেয়া অর্থ পেতে দ্বারস্থ হয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের কাছে।
ইতিপূর্বে কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর করেনি রাজ্য সরকার। তাই আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে পুনরায় দ্বারস্থ তাঁরা। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থারের এজলাসে উঠে এই মামলা। সারাজীবন স্কুলে পড়িয়েছেন। কিন্তু অবসরের পর এখনও বকেয়া অর্থ হাতে পাননি বলে অভিযোগ তোলেন কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে চলা মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে ভর্ত্সনা করেন বিচারপতি রাজশেখর মান্থার। বিচারপতি এদিন মামলার শুনানি পর্বে বলেন, ‘শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হওয়া উচিত সরকারের।’বকেয়া না পাওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন আইনি লড়াই করছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকেরা। এই সংক্রান্ত মামলায় হাইকোর্ট পূর্বেই বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ। ফের হাইকোর্টে সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়।এদিন বিচারপতি মান্থার এজলাসে এই মামলার শুনানি চলে। সেখানেই বিচারপতি রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চান, ‘শিক্ষকদের বকেয়া পেতে এত দেরি হচ্ছে কেন? ‘শিক্ষকরা শিক্ষাদান করেন। এটা তাঁদের মহৎ কাজ। অবসরের পর তাঁদের পাওনা পেতে দেরি হওয়া খুবই দুঃখজনক।’
বিচারপতির নির্দেশেই এদিন ভার্চুয়াল ভাবে ছিলেন বিভিন্ন জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক ও জেলাশাসক। মামলার শুনানি চলাকালীন তাঁদের উদ্দেশে বিচারপতি মান্থার প্রশ্ন করেন, ‘কী করছেন আপনারা? আপনাদের এই আমলাতন্ত্রকে আদালত মানতে নারাজ।সরকারি ফাইলের গেরোয় শিক্ষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন না।’
এদিনের এজলাসে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা জেলাশাসক ও স্কুল পরিদর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ওঁদের থেকে সার্ভিস নিয়েছেন, ‘এখন পাওনা দেওয়ার সময় ঘোরাচ্ছেন? কাল যদি আপনাদের সঙ্গে এমন হয় তখন কী করবেন?’ বিচারপতি অবিলম্বে শিক্ষকদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সরকারকে আরও সচেতন হওয়া উচিত বলে বিচারপতি জানিয়েছেন। বিচারপতি আরও বলেন, “শিক্ষকরা শিক্ষাদান করেন। এটা মহত্ কাজ। তাই তাঁদের অবসরের পর পাওনা আর্থিক সুযোগ সুবিধা পেতে বিলম্ব খুবই দুঃখজনক। এই বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।”