সেখ কুতুবউদ্দিনঃ কেন্দ্র সরকারের সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের ‘কোর এন্ড রিসার্চ গ্রান্ট-এ অন্তর্ভুক্ত হল আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। বুধবার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগের ড. হেতায়েতুল্লাহ মীর বলেন, গবেষণার বরাদ্দের জন্য আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সারা দেশের মোট ১৬০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তার মধ্যে রাজ্য সরকার পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে শুধু আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এই ধরণের গবেষণার গ্রান্ট প্রথম বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
অধ্যাপক হেদায়েতুল্লা মীরের মতে, গবেষণার বিষয় এবং টিমের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়েছে আলিয়াকে। তাঁর মতে, গবেষণায় উন্নত হলে প্রযুক্তি উন্নয়ন সম্ভব। কেন্দ্র সরকার আইআইটি, কেন্দ্র সরকার পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ স্টেট ইউনিভারসিটিতে গবেষণার মান উন্নত করতে প্রতি বছর ১৬০টি গবেষণার টিমকে বরাদ্দ দেয়। তাতে ২০ লক্ষ থেকে শুরু করে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এই গবেষণায় নেতৃত্বে রয়েছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপক ড. হেদায়েতুল্লাহ মীর সহ আরও পাঁচজন।
হেদায়েতুল্লাহ মীর বলেন, এটা আলিয়ার সাফল্য। এই ধরণের গবেষণায় আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এ রাজ্যের অন্য কেউ তালিকাভুক্ত হয়নি। এটা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্ব।
এই গবেষণা প্রসঙ্গে হেদায়েতুল্লাহ মীর বলেন, আলোক সক্রিয় মেটাল অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক (এম ও এফ) তৈরি করা হবে। এর ফলে অতিবেগুনি রশ্মী বা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে খুবই বিরল প্রতিক্রিয়া দেখাবে, যা দেখতে হবে ভুট্টার খই ভাজার মতো। এর মাধ্যমে আমরা মাইক্রো সোলার প্যানেল তৈরি করতে পারবো, যেটা ঠিক সূর্যমুখী ফুলের মতো কাজ করবে, যেমন নির্দেশনা দেওয়া হবে, সেইমতো কাজ করবে। এমনকি লেসার নির্দেশক মাইক্রো মেশিন, যা মানব দেহের সমস্ত অঙ্গে ভ্রমণ করতে পারবে, যা শল্য চিকিৎসায় এক নতুন দিশা দেখাবে। তিনি আরও বলেন, যে এই সাফল্যের জন্য গ্রুপের সদস্যদের অনেক বছরের একান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টার কথা বলেছেন। অত্যাধুনিক যন্ত্রের অভাব থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি, রয়েল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির মতো বিশ্ববন্দিত জার্নালে ৮৫ টির বেশি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে তাঁদের গবেষণা। তাঁদের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, কিভাবে গ্রীন হাউস গ্যাস, যেমন বায়ুদূষণ, কার্বন ডাই অক্সাইড কে বায়ুমন্ডল থেকে কমিয়ে গ্লোবাল ওয়ার্মিং থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও বিদ্যুৎ খরচ কমানোর উপায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছে ফ্রেমওয়ার্ক পদার্থের মাধ্যমে।
এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. নুরুস সালাম বলেন, এই ধরণের গবেষণায় কেন্দ্রের সহযোগিতা মিলেছে। এটা গর্বের বিষয়। গবেষণায় বরাদ্দ খুবই প্রয়োজনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে গবেষণায় সবরকম সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন রেজিস্টার।
ড. বাসুদেব দত্ত বর্তমানে জাপানের কিয়েতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্র’্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর সুসুমু কিতাগওয়ার এর অধীনে পোস্ট ডক্টরেট করছেন। ২০১৯ সালে ড: বাসুদেব এশিয়ান কনফারেন্সে ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড পান। সম্প্রতি মীর গ্রুপ এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ড: শামীম খান ফ্রান্স এর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ইকোল নরমাল সুপেরিয়ার (সি এন আর এস) এর রিসার্চ ডিরেক্টর প্রফেসর সেরের এর অধীনে পোস্ট ডক্টরেট অফার পেয়েছেন।
যেখানে আই আই টির মতো নামি প্রতিষ্ঠানের স্কলাররা সুযোগ পেতে হিমশিম খায়, সেখানে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারদের এই সাফল্য সত্যি গর্বের বিষয়। ড. শামীম ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়ান কনফারেন্সে বেস্ট পোস্টার অ্যাওয়ার্ড ও সম্প্রতি ইনসা ইয়ং রিসার্চার অফ দা ইয়ার ২০২২ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।