বিশেষ প্রতিবেদক: ভারতের প্রায় চিরস্থায়ী মেহমান হিসেবে বাংলাদেশি নাগরিক তসলিমা নাসরিন ভালোই ছিলেন। দিল্লিতে তাঁকে একটি সেফ হাউসে রাখা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ঢালাও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আর এই সেফ হাউসে বসে তসলিমা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে একের পর এক বিবৃতি দিয়ে নিজের বাজার গরম রেখেছেন।
তসলিমার ‘দ্বিখণ্ডিত’ উপন্যাসে প্রফেট মুহাম্মদ সা. এবং ইসলাম সম্পর্কে অশালীন নানা মন্তব্য কারায় তাঁর রগরগে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস থেকে বেশকিছু প্যারা বাদ দিতে হয়। কিন্তু তসলিমা নিরাপত্তার অভাববোধ করায় তাঁর প্রিয় শহর কলকাতায় থাকতে পারেননি। অবশ্য তিনি ভারত সরকারের মেহমানদারিত্বে ভালোই রয়েছেন নয়াদিল্লিতে। আর সময় কাটনো কিংবা মিডিয়ায় আসার জন্য মাঝেমধ্যেই ছাড়ছেন ইসলাম-বিদ্বেষী নানা মন্তব্য করেন। তসলিমা অন্য বিষয়ে ফেসবুক বা ট্যুইটারে কোনও কিছু পোস্ট করলে তাতে বাজার গরম হয় না। তবে ইসলাম সম্পর্কীয় কিছু বললেই মিডিয়া তা লুফে নেয়। আর তসলিমাও এ নিয়ে কোনও মওকাই ছাড়েন না। বিতর্কে সিদ্ধহস্ত তসলিমা নাসরিনের বয়ানবাজি থেকে রাখি সাওয়ান্তও মুক্তি পাননি। দোষের কথা, রাখি সাওয়ান্ত ঘোষণা করেছেন, তিনি ইসলাম কবুল করেছেন। আর বিয়ে করেছেন একজন মুসলিমকে। রাখি নতুন নাম গ্রহণ করেছেন ফাতিমা। তাঁর স্বামীর নাম আদিল খান। এখন তিনি একটু সভ্যভব্য পোশাক পরছেন। স্বামীর সঙ্গে উমরাহতে যাওয়ার কথাও বলেছেন। রাখির ইসলাম গ্রহণ করা নিয়েও তসলিমা তীর্যক মন্তব্য করেছেন।
তা এ নিয়ে কোনও বিবাদ নেই। তসলিমা যে কাজকে প্রায় প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তা তো তিনি চালিয়েই যাবেন!
কিন্তু বোল বেঁধেছে তসলিমার স্বাস্থ্য নিয়ে। দিল্লির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বেশ ছিলেন তসলিমা। একবার শুধু দিনকয়েকের জন্য গলার সমস্যায় বোবা অর্থাৎ মূক হয়ে গিয়েছিলেন। কয়েকদিন পরে তিনি স্বর ফিরে পান। এ বাদ দিলে তসলিমা মোটামুটি সুস্থ শরীরে নিজের কর্মে ব্যস্ত ছিলেন।
কিন্তু তসলিমা নিজের ফেসবুকে ছবি-সহ একটি পোস্ট দিয়ে বলেছেন, তিনি নাকি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। আর এজন্য দায়ী করেছেন ভারতীয় এক নামি হাসপাতাল এবং অর্থোপেডিক বা শল্যচিকিৎসকদের। তসলিমা বলছেন, চিকিৎসকরা তাঁকে বোকা বানিয়ে বিভ্রান্ত করে তাঁর হিপ বা নিতম্ব থেকে অঙ্গ বাদ দিয়েছেন, হিপ রিপ্লেসমেন্ট করে দিয়েছেন। আমার জয়েন্টে কোনও ধরণের রোগ ছিল না। জয়েন্ট আমার চমৎকার ছিল, কোনও দিন কোনও পেইন ছিল না। যে সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম, সেই সমস্যার ট্রিট্মেন্ট না করে ক্রমাগত মিথ্যে কথা বলে আমার শরীরের সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হয়েছে।
আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না বড় ডাক্তাররা এমন ভয়াবহ ক্রাইম করতে পারেন। আর আমি জানি না আমারও বুদ্ধিসুদ্ধি কোথায় উবে গিয়েছিল যে, এমন ক্রাইমের শিকার হতে নিজেকে দিলাম।
তসলিমা ক্ষোভ, আপেক্ষ ও ক্রোধের সঙ্গে বলছেন, আমি সাইক্লিং, সুইমিং, ট্রেডমিল, দৌড়ানো সবই করতাম। আমাকে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে, চিন্তার কিছু নেই, তুমি হাঁটতে পারবে। ফাঁকে এও বলে দেওয়া হল তবে, কোমোডে বসতে পারবে না, বু হতে পারবে না, পায়ের ওপর পা রাখতে পারবে না, ওজন বহন করতে পারবে না, নর্মাল চেয়ারে বসতে পারবে না, এরকম হাজারো রেস্ট্রিকশন। এ কেমন জীবন আমাকে দেওয়া হল, এই পঙ্গু জীবন পেতে কি আমি প্রাইভেট হাসপাতালে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করতে এসেছিলাম? উপদেশ এলো, আমি যেন একটু পজিটিভ হই।
পঙ্গু জীবন নিয়ে ঠিক কী করে পজিটিভ হওয়া যায়, সেটা বুঝতে পারছি না। আমার কাছে মনে হচ্ছে, মাথায় ব্যথা পেয়ে এসেছিলাম চিকিৎসার জন্য, আমার মাথাটা কেটে নেওয়া হয়েছে। সার্জনদের যুক্তি হল, মাথা ফেলে দিলে মাথা ব্যথা করবে না।
প্রাইভেট হাসপাতালের টার্গেট মার্কেটের শিকার হলাম। লেখক এবং ডাক্তার হিসেবে হাসপাতালে আমার নাম লেখা হয়নি। ‘বাংলাদেশি রোগী’ হিসেবে লেখা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, তসলিমা তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশের পরিচয়ে নিজের নামের সঙ্গে ‘বাংলাদেশি’ লিখতে চান না।
তসলিমার অনুরাগী, বন্ধুরা তসলিমার আসন্ন ‘পঙ্গু জীবন’ নিয়ে খুবই আশঙ্কায় রয়েছেন। তাঁরা সকলেই চান, তসলিমা সেরে উঠুন। কিন্তু স্বয়ং তসলিমার মতে সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।