পুবের কলম প্রতিবেদক: স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন থেকেই কলকাতার বাবুঘাটে গঙ্গা আরতির প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাণসীতে গঙ্গা আরতি দেখে এসে বাংলাতেও একইভাবে গঙ্গা আরতির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইমতো কোথায় এই গঙ্গা আরতি হতে পারে তার খোঁজ চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। প্রাথমিকভাবে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বাবুঘাটকেই গঙ্গা আরতির জন্য বেছে ছিলেন। বুধবার সেই মতো নিয়ে সেই ঘাট পরিদর্শন করেন তিনি। এরপর আউট্রাম ঘাটে গঙ্গাসাগর মেলার আগত পুণ্যার্থীদের স্বাগত জানাতে গিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এই আয়োজনকে পূর্ণ করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া নির্দেশ দিলেন।
জানা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী চান, কাশী বিশ্বনাথে যেভাবে গঙ্গা আরতি হয়, সেই আদলেই কলকাতার হোক গঙ্গা আরতি। ইতিমধ্যেই এই নিয়ে যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, জল আর আগুন এই দুটি থেকে বড় বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তিনি নিজে ঘুরে দেখে নিয়ে তবেই এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন।
একই সঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন বাবুঘাটের পাশাপাশি দক্ষিণেশ্বর ও বেলুড় মঠেও হতে পারে গঙ্গা আরতি। এক্ষেত্রে কালীঘাট এবং তারাপীঠেও একই ধরনের আরতি হোক চান মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে প্রথমে কলকাতার কাজ সম্পন্ন করে ধাপে ধাপে পরবর্তী ক্ষেত্রে গঙ্গা আরতি চালু করা যায় কিনা সেই উদ্যোগ নিতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে, বুধবার কলকাতার আউট্রাম ঘাট থেকে সাগরগামী পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সকলকে নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে মেলা চলাকালীন কোন ধরনের কোন গুজবে কান না দিয়ে সরকারি ঘোষণার উপর ভরসা রাখতে বলেছেন। তিনি বলেন, বাম আমলে গঙ্গাসাগরে কোন উন্নয়ন সম্পন্ন হয়নি। তবে এই সরকারের সময় সাগরে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। আর তাই কায়া কলেবরে বদলে গিয়েছে গঙ্গাসাগর।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনা যায়, যেতে গেলে জলের উপর দিয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট ভেসেলে উঠতে হয়। আপনারা কেউ তাড়াহুড়ো করবেন না। তা না হলে যখন,তখন বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। সকলে আসুন গঙ্গাসাগর মেলায়। ঘুরে দেখুন মেলা। এখান থেকে পবিত্র গঙ্গাজলে স্নান করুন। বাড়িতে নিয়ে যান পবিত্র গঙ্গা জল। আপনার পরিবারের এবং ছেলেমেয়েদের কল্যাণ হবে।
প্রসঙ্গত, গঙ্গাসাগরকে জাতীয় মেলা হিসেবে ঘোষণার দাবি প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন আরো একবার তারই পুনরাবৃত্তি শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। একইসঙ্গে ছিল বিজেপির প্রতি কটাক্ষ। তিনি বলেন,কুম্ভ মেলা জাতীয় ফান্ড পায়। গঙ্গাসাগর তা পায় না। কুম্ভ মেলার জায়গাগুলি রেল পথে সংযুক্ত। গঙ্গাসাগর প্রান্তিক জায়গায় অবস্থিত। রেল পথে সংযুক্ত নয়। গঙ্গাসাগর মেলায় পরিকাঠামো বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। কেউ কেউ সমালোচনা করেই দায় সারেন। গঙ্গাসাগরে গিয়ে দেখুন সেখানে কত কাজ করেছে রাজ্য সরকার।
এদিন কোনও খবর ছড়িয়ে অশান্তির চেষ্টা হতে পারে বলে পূণ্যার্থীর সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ কোনও ভুয়ো প্রচার বা প্ররোচনামূলক কথা বললেও সেদিকে কান দেবেন না। বরং সরকারের তরফে ঘোষণা করা হয় সেদিকে নজর রাখুন। ভুয়ো খবর থেকে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হতে পারে। এর থেকে হুটোপাটিতে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই কারণেই আগে থেকে সাবধান করছেন তিনি। এদিন এই মঞ্চ থেকে নাম না করে বিজেপিকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সেই হিন্দু ধর্ম মানি যা স্বামীজি বলেছেন। সেই হিন্দু ধর্ম আমরা মানি যা রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছেন। সবাই একই কথা বলেছেন, মানবিকতা। মানব ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম।