পুবের কলম ওয়েব ডেস্ক: ইতিহাস পাঠ্যে ভারতে নারী শিক্ষার অগ্রদূত হিসেবে সোনালী কালিতে যার নাম লেখা, তিনি সাবিত্রী বাই ফুলে। তাঁর আরও এক পরিচয়, তিনি সমাজ সংস্কারক মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলের স্ত্রী। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরোধীতা করে স্বামী-স্ত্রী মিলে নারী ও দলিত শিশুদের শিক্ষার উদ্যোগ নিলে, তাদেরকে গ্রাম ছাড়া করা হয়। এরপর ১৮৪৮ সালে, ভারতে প্রথম মেয়েদের স্কুল তৈরি করেন তাঁরা। এতটা ইতিহাস ভারতের সব ইতিহাস পাঠ্যেই লেখা আছে। কিন্তু সমাজ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর কোথায় তাঁরা স্কুল বাড়ি পেলেন? কারা তাঁদের সাহায্য করলেন সেদিন? সেই সব কাহিনীর বেশিরভাগটাই সুকৌশলে পর্দা দিয়ে আড়াল করা হয়েছে অনেক আগেই। ১৭৫ বছর আগে কোণঠাসা ফুলে দম্পতি যাদের উঠোনে নারী শিক্ষার বীজ পবন করেছিলেন, তাঁরা হলেন ফাতিমা শেখ ও তাঁর ভাই উসমান শেখ। সমাজ থেকে বিতাড়িত দলিত দম্পতিকে নিজেদের বাড়ির উঠোনে মেয়েদের স্কুল গড়তে জায়গা দিয়েছেন ফাতিমা ও তাঁর ভাই।
শুধু স্কুল বাড়ি দেওয়া নয়, পড়ানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের প্রথম মুসলিম শিক্ষিকাও হলেন ফাতিমা শেখ। আগামী ৯ জানুয়ারি এই বিরল প্রতিভাবান মুসলিমার ১৯২ তম জন্মদিন। সেই উপলক্ষে বৃহস্পতিবার অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনুল জেলার জেলা পরিষদ উর্দু হাই স্কুল প্রাঙ্গনে ফাতিমা শেখের একটি আবক্ষ ভাষ্কর্য উন্মোচন করা হয়েছে।
এই ভাষ্কর্যটি দান করেছেন, শ্রী নকমিত্তালা শ্রীনিবাসুলু। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্কুলের শিক্ষক সহ ছাত্ররা। সম্প্রতি নারী শিক্ষায় বিস্মৃত ফাতিমা শেখের অবদানের কথা যুক্ত করা হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের স্কুল পাঠ্যে।
সাবিত্রীবাই ফুলে ও জ্যোতিরাও ফুলে প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি স্কুলে পড়িয়েছেন ফাতিমা। সেই সূত্রে তিনিই আধুনিক ভারতের প্রথম মুসলিম শিক্ষিকা। শুধু পড়ানো নয়, জ্যোতিরাও ফুলে প্রতিষ্ঠিত স্কুলে নারী ও দলিত শিশুদের ভর্তি করানোর জন্য বাড়ি-বাড়ি ঘুরে পড়ুয়াদের নাম লেখা ও তাদেরকে পড়াশোনার জন্য উৎসাহ দিতেন ফাতিমা শেখ।
ফাতিমার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা সাবিত্রীবাই ফুলের সম্মানে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাল্টে রাখা হয়েছে সাবিত্রীবাই ফুলে পুনে বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস পাঠ্যেও তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে। অথচ মেরুকরণের রাজনীতি , মুছে ফেলেছে ফাতিমা শেখের নাম। দেশে বিস্মৃত হলেও গতবছর ৯ জানুয়ারি ভারতের প্রথম মুসলিম শিক্ষিকাকে সম্মান জানিয়ে একটি ডুডল প্রস্তুত করেছিল সার্চ ইঞ্জিন গুগল। ১৭৫ বছর পর ফাতিমা শেখের স্মৃতিতে ভাষ্কর্য উন্মোচনে ক্ষীণ আশার আলো দেখছেন ওয়াকিফহাল মহল। তাঁরা আশা রাখছেন, দেশের ইতিহাস পাঠ্যেও হয়তো একদিন উঠে আসবে ভারতের প্রথম মুসলিম শিক্ষিকা ফাতিমা শেখের নাম।