পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ শুধুমাত্র জনসংখ্যাই কোনও নির্বাচনী কেন্দ্রের আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে একমাত্র মানদণ্ড বা ভিত্তি হতে পারে না। ৪ জেলাকে সংযুক্তির একদিন পরই অর্থাৎ রবিবার এই মন্তব্য করেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, ‘জেলা সংযুক্তির ক্ষেত্রে আরও অনেক মানদণ্ড বা নির্ণায়ক শক্তি থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের সংসদের তৈরি করে দেওয়া আইনের পথেই হাঁটতে হবে।’ হিমন্তর সাফ কথা, ‘সংসদে এটি নিয়ে বিতর্ক হওয়া উচিত। কারণ, বর্তমান আইনে কম জনসংখ্যার এলাকার তুলনায় বেশি জনসংখ্যার এলাকাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
শনিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিশ্বনাথ জেলাকে সোনিতপুর জেলার সঙ্গে, হোজাই জেলাকে নগাঁও জেলার সঙ্গে, তামুলপুর জেলাকে বক্সার জেলার সঙ্গে ও বাজালি জেলাকে বরপেটা জেলার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
যদিও এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনের আসন পুনর্বিন্যাসের জন্য তাঁরা জেলা সংযুক্তির সিদ্ধান্ত নেননি, তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রশাসনিক সুবিধার কথা ভেবে। এটা একটি অ-রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘জেলা সংযুক্তি তুলনামূলকভাবে আসন পুনর্বিন্যাসের ক্ষেত্রে খুব কমই প্রভাব ফেলবে, তবে এর ফলে সবথেকে বেশি উপকৃত হবে জনতারই।’ এরপরই অসম সরকারের এই জেলা সংযুক্তির নেপথ্যে কী কারণ তার কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছে।
হিমন্ত বলেন, ‘রাজ্য সরকার জেলাগুলির প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিল জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দেওয়ার জন্য। কিছু এলাকায় সেই নির্দেশ মানা হয়নি।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য লুফে নিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, হিমন্তর মন্তব্য থেকেই স্পষ্ট যে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করেই এই আসন পুনর্বিন্যাস ও জেলা সংযোগ করা হচ্ছে। যাতে নির্বাচনী কেন্দ্রগুলিতে মুসলিম প্রতিনিধিত্বকে হ্রাস করা যায়। আর সেজন্যই ২০০১ সালের আদম শুমারিকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
২০১১ সালের জনগণনার তথ্য নেওয়া হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অসমের বহুল চর্চিত যে আন্দোলন হয়েছিল তার প্রধান দাবি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের শণাক্ত করুক। তাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়ে বিতাড়ন করুক। এই একই উদ্দেশ্যে এনআরসি করা হয়েছিল। কিন্তু, তা রাজ্যের আদি বাসীন্দাদের অধিকার ও ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে পারেনি। আর তাই এই আসন পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ হয়তো আমাদের সমাজকে রক্ষা করবে ও বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে জনবিন্যাস পরিবর্তনকে রুখে দেবে। জেলার সীমান্ত এলাকাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের একটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।