পুবের কলম, ওয়েবডেস্ক: প্রয়াত হয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হীরাবেন। গত জুন মাসেই একশো বছর বয়সে পা রেখেছিলেন তিনি। আজ ভোর রাতে সাড়ে তিনটে নাগাদ প্রয়াত হন হীরাবেন। মঙ্গলবার মধ্যরাত আচমকাই শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তার পরেই তাকে আহমেদাবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুস্থ হয়ে উঠছিলেন বলে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়। দুদিনের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আজ ভোরে প্রয়াত হলেন হীরাবেন।
বাংলায় বন্দে ভারতের এক্সপ্রেসের সূচনা সহ জোকা বিবাদি মেট্রো উদ্বোধনে বাংলায় আসার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির। আচমকা মায়ের প্রয়াণে সমস্ত কর্মসূচী বাতিল করা হয়। ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
মায়ের সঙ্গে ছেলে নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক কারুর অজানা নয়। তাঁর কাজের পিছনে মায়ের প্রেরণা, অবদান, কঠিন সংগ্রামের কথা সব সময় তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ মাকে চিরদিনের মতো হারিয়ে ভেঙে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।
মায়ের জীবন সংগ্রামের কঠিন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ভাই ও মায়ের সঙ্গে পারিবারিক জীবন তাঁর কাটত ভাডনগরের একটি ছোট্ট মাটির বাড়িতে৷
মায়ের স্মৃতিচারণায় মোদি জানিয়েছেন, তাঁর মা কেবল মাত্র দৈনিক গৃহকর্মের কাজ করতেন এমনটা নয়, বাড়ির উপার্জনের দিকেও নজর রাখতেন তিনি। কয়েকটি বাড়িতে বাসন ধোয়ার কাজ করতেন মা। উপার্জনের জন্য চরকাও কেটে সুতো তৈরি করতেন তিনি৷
তবে মায়ের চিন্তা ভাবনা ছিল অনেক আলাদা। একবার যে লক্ষ্য নিতেন সেখান থেকে সরে আসতেন না। পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সদা সতর্ক থাকতেন হীরাবেন৷ সাফাইকর্মীদের প্রতি হীরাবেনের ছিল গভীর সন্মান৷ মোদি মায়ের স্মৃতিচারণায় বলছেন, যাঁরা বাড়ির পাশের ময়লা নর্দমা পরিস্কার করতে আসতেন, তাঁদের কখনও চা না খাইয়ে ছাড়েননি মা। সাধারণ মানুষের জন্য সব সময় ভাবনা চিন্তা করতেন।
গরিব মানুষের কল্যাণে মনযোগ দিতে মা সব সময় উৎসাহ দিতেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে যখনই গুজরাত সফরে যেতেন তখনই মায়ের কাছে যেতেন প্রধানমন্ত্রী। অনেক সময় নিরাপত্তা ছাড়াই চলে যেতেন তিনি।
২০০১ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার পরে সে বারও গুজরাতে পৌঁছে সরাসরি মায়ের কাছে গিয়েছিলেন তিনি৷
মোদি বলেন, সেই সময় মা বলেছিলেন, আমি আমি তোমার সরকারি কাজ বুঝি না। কিন্তু একটা কথা বলি, কখনও ঘুষ নিও না৷ মোদিকে তিনি সব সময় বলতেন, তাঁকে নিয়ে চিন্তা না করতে, বরং সরকারি কাজে মন দিতে৷
প্রধানমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, বৃষ্টির সময় বাড়ির ছাদ ফুটো হয়ে জল পড়ত৷ জল জমে যেত তাদের মাটির বাড়িতে। মা তখন বাড়ির বাসনপত্র সেই ছাদ চোঁয়ানো জল ধরতে বসিয়ে বাড়ির চারদিকে বসিয়ে রাখতেন।
মোদি বলেন, শৈশব থেকে মাকে নানা ধরনের লড়াই করেই বড় হতে দেখেছি। কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই জীবন কেটেছে। মা আমার সাধারণ, কিন্তু একই সঙ্গে অনন্য৷ যেমন সব মায়েরাই হন৷
মা হীরাবেন যে তাঁর জীবনে অনেক বড় জায়গা জুড়ে আছেন সেকথা বার বার স্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মায়ের সঙ্গে প্রায়ই দেখা করতে গুজরাত যেতেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় মাকে নিয়ে ‘মাদার’ নামে একটি ব্লগও লিখেছিলেন তিনি। কিছু দিন আগে গুজরাত নির্বাচনের প্রচারে গিয়েও মায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন মোদি।