ইনামুল হক, বারাসত: গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী নকশিকাঁথা রক্ষায় উদ্যোগ নিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট সুচিশিল্পী জোহর আলী মল্লিক।
নকশিকাঁথা শিল্পীদের সম্মান জানাতে একটি বিশেষ প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন তিনি। শনিবার বারাসতের দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বড়া গ্রামে শিল্পীর নিজস্ব মল্লিক আর্ট গ্যালারি চত্বরে এই প্রতিযোগিতামূলক প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের টেক্সটাইল মন্ত্রকের অধীন উন্নয়ন কমিশনার (হস্তশিল্প) তথা হ্যান্ডিক্রাফট সার্ভিস সেন্টারের আধিকারিক স্নেহাংশু শেখর দাস। অন্যদের মধ্যে ছিলেন বিশেষ অতিথি নীতা দাস, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক ড. নিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, তথ্যচিত্র নির্মাতা রূপক প্রামাণিক, বারাসত পুরসভার পৌর পারিষদ পান্নালাল বসু, বারাসাত থানার আইসি দীপঙ্কর ভট্টাচার্য প্রমুখ।
এদিন প্রতিযোগিতায় প্রথম নাসিমা বিবি, দ্বিতীয় সাবির আলী এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী শিপ্রা নন্দীকে শংসাপত্র ও নগদ অর্থ মূল্যের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
আধিকারিক স্নেহাংশু শেখর দাস বলেন, যেকোন সৃজনশীল শিল্প ভালোবেসে করলে অবশ্যই তাঁর স্বীকৃতি পাওয়া যায়। অর্থের বিনিময়ে কোন শিল্পের মূল্যায়ন করা যায় না।
জোহর আলী মল্লিক এ পর্যন্ত তাঁর সমস্ত সূচিকর্মে যত সংখ্যক সেলাই ফোঁড় করেছেন তা তাঁর সারা জীবনের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের থেকেও বেশি বলে আমার মনে হয়। তিনি সূচি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলকে সরকারি পরিচয় পত্রের জন্য আবেদনের বিষয়ে পরামর্শ দেন।
জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. নিরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, জোহর আলী মল্লিকের মতো মানুষদের যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ের আধিকারিকদের আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
পুর পরিষদ পান্নালাল বসু বলেন, রঙিন সুতোয় যেভাবে তার শিল্পকর্মগুলো তৈরি করেছেন তা দেখে বিস্মিত হতে হয়। তথ্যচিত্র নির্মাতা রূপক প্রামানিক জানান, জোহর আলী মল্লিকের জীবন ও কর্ম নিয়ে ‘বাংলার গৌরব গাথা বাঙালির নকশি কাঁথা’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। আমি চাই তাঁর মতো ব্যক্তিকে রাজ্য সরকার যদি যথাযথ সম্মান দেয় তাহলে বাংলার সূচিশিল্পীরা আরও বেশি উৎসাহিত হবে।
প্রসঙ্গত, বছর ষাটের জোহর আলী মল্লিক সরকারি পর্যায়ে জেলা স্তরে ৫ বার ও রাজস্তরে ২ বার পুরস্কৃত হয়েছেন। দেশে ও বিদেশে তাঁর শিল্পকর্ম বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে। জোহর আলী মল্লিক বলেন, নকশীকাঁথা শিল্পকে ধরে রাখতে এবং সূচি শিল্পীদের সম্মান ও উৎসাহ দিতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। আমার আবেদন, বর্তমান এবং আগামী প্রজন্ম যদি ভালোবেসে এই শিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা করে তাহলে বাঙালির নকশিকাঁথার গৌরবময় অধ্যায় অব্যাহত থাকবে। শিল্পীর সুচ-সুতোয় নতুন করে এই প্রজন্মের ‘রূপাই-সাজুর আলেখ্য’ রচিত হতে পারে নকশি কাঁথায়।