কৌশিক সালুই বীরভূম:- বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের দিল্লি যাত্রার ঘটনায় নাটকীয় মোড়। দলেরই এক কর্মীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল তার বিরুদ্ধে। তাকে দুবরাজপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। এদিকে দিল্লিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরের জেরা থেকে বাঁচতেই কৌশল বলে অভিযোগ বিরোধীদের। যদিও তৃণমূল বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়া বলেই দাবি করেছে।
গত সোমবার দিল্লির রাইস এভিনিউ আদালত দিল্লিতে অনুব্রত মণ্ডলকে ইডি জেরা করবে বলে অনুমতি দিয়েছে। আর সেদিনই বীরভূমের দুবরাজপুর থানায় তার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার নতুন মামলা অভিযোগ দায়ের হলো। স্থানীয় বালিজুরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান শিব ঠাকুর মন্ডল অভিযোগ করেন বিধানসভা নির্বাচন প্রাক্কালে অনুব্রত মণ্ডল তাকে দুবরাজপুর দলীয় কার্যালয়ে ডেকে গলা টিপে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। কারণ সেই সময় ওই প্রাক্তন প্রধান তৃণমূল ছেড়ে অন্য দলে নাম লেখাতে চেয়েছিল। সেই সময় ভয়ে দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন এবং অনুব্রত মণ্ডল জেলবন্দি হতেই সাহস করে ঘটনার কার্যত কুড়ি মাস পর তাকে গলা টিপে খুনের চেষ্টা অভিযোগ করলেন। মঙ্গলবার দুবরাজপুর আদালতে সেই মামলায় তোলা হলে বিচারক ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪ দিনের হেফাজত চাওয়া হয়েছিল। আগামী ২৭ ডিসেম্বর তাকে আদালতে হাজির করানো হবে। এদিকে এই নতুন করে দুবরাজপুর থানায় খুনের চেষ্টার মামলা দিল্লিতে ইডির জেরা থেকে বাঁচতে বলে অভিযোগ বিজেপির। এদিন অনুব্রত মণ্ডলকে আসানসোল সিবিআই হেফাজত থেকে দুবরাজপুর আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশি হেফাজত পাওয়ার পর অনুব্রত মন্ডলের স্থানীয় মানসায়ের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পুলিশের গাড়ির মধ্যেই ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীরা তার স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করেন এবং সেখান থেকেই জানা যায় অনুব্রত মণ্ডলের জ্বর রয়েছে।
অভিযোগকারী শিব ঠাকুর মন্ডল বলেন,” গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিভিন্ন কারণে দল ছাড়তে চেয়েছিলাম বলে দুবরাজপুর পার্টি অফিসে দেখে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল আমাকে প্রথমে গালাগালি দেয় এবং পরে থাপ্পড় মেরে গলা টিপে ধরে। সেই থেকেই সময়ের অপেক্ষায় ছিলাম। তারপরেই আমি তার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা অভিযোগ দায়ের করেছি”। দুবরাজপুর আদালতের সরকারি আইনজীবী রাজেন্দ্রপ্রসাদ দে বলেন,” গত ১৯ ডিসেম্বর দুবরাজপুর থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭, ৩২৩,৩২৫ ও ৫০৬ ধারায় মামলা রুজু হয়। তাতে অভিযুক্ত অনুব্রত মণ্ডল কে আদালতে তোলা হলে পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪ দিনের হেফাজত চাওয়া হয়।
বিচারক ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত মনজুর করেন”। বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি ধ্রুব সাহা জানান,” ইডির জেরা থেকে তিহার যাত্রা বাঁচতে এ ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে। তবে এভাবে কোনমতেই বাঁচতে পারবে না” প্রসঙ্গত গরু পাচার মামলায় আসানসোল জেলে বন্দি বীরভুম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে ইডি জেরা করতে পারবে সোমবার আদালত সেই নির্দেশ দিয়েছে দিল্লির রাউস এভিনিউ আদালত। তিহার জেলে বর্তমানে বন্দি রয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের প্রাক্তন দেহরক্ষী সেহেগাল হোসেন। তার সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর সোমবার নাটকীয় ভাবে বীরভূমের দুবরাজপুর থানায় অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনলেন তারই দলের এক কর্মী তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান এবং মঙ্গলবার সেই মামলায় দুবরাজপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক ৭ দিনের পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। এদিকে কয়েক মাস পর জেলার মাটিতে পা রেখেছেন দলের সর্বোচ্চ নেতা। সেই অনুব্রত মণ্ডল কে দেখার জন্য দুবরাজপুর আদালত ও থানা চত্বর এলাকায় ছোট, বড়, মাঝারি বিভিন্ন ধরনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভিড় দেখা গেল। তাদের সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় পুলিশ কর্মীদের।