শুভজিৎ দেবনাথ, গয়েরকাটা: প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ভুয়ো ফর্ম বিতরণ কে কেন্দ্র করে বিতর্ক ছড়িয়েছে বানারহাট ব্লকের সাঁকোয়াঝোরা -১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় । ভুয়ো ফর্ম বিলি নিয়ে নিয়ে রাজনৈতিক তর্জায় জড়িয়েছে তৃনমূল ও বিজেপি। ঘটনার জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে দুদল। তৃণমূলের অভিযোগ, গ্রামের সহজ সরল মানুষ কে ঘর পাইয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি নেতারা নিজেরা একটি ফর্ম তৈরি করে তা বিলিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই ফর্ম পূরণ করে তাদের কাছে জমা দিলেই মিলবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কাছ থেকে ফর্ম বাবদ টাকাও আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। যদিও এই ফর্মের কোন সরকারি ভিত্তি নেই বলে দাবি তৃণমূলের। অন্যাদিকে, এই অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির পাল্টা দাবি গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পাশেই জেরস্ক দোকান থেকে চড়া দামে এই ভুয়ো ফর্ম বিলি করছেন এক দোকান ব্যবসায়ী। আর এর পেছনে যোগসাজশ রয়েছে তৃণমূলের। তৃনমূল নেতারা সেই ফর্মের টাকা থেকে কাটমানি খাচ্ছেন বলে অভিযোগ বিজেপির। অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছে গয়েরকাটা।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় নতুন করে ঘর পাওয়ার আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে না। কেউ বেআইনি ভাবে এই প্রকল্পের লিস্টে নিজের নাম উঠিয়ে থাকলে সেই সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করার শেষ তারিখ ছিল ১৫ ডিসেম্বর। কিন্তু তারপর ও দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন মানুষ একটি ভুয়ো ফর্ম পূরন করে সাঁকোয়াঝোরা -১ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে জমা দিতে আসছেন। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বিনোদ ওঁরাও বলেন, ‘ ভুয়ো ফর্ম নিয়ে কিছু মানুষ কে অযথা বিভ্রান্ত করে তাদের থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমরা এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। ’ জলপাইগুড়ির জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘ কোন ছাপানো ফর্ম আবেদনের জন্য গ্রহন করা হচ্ছেনা। মানুষ কে বিভ্রান্ত করার জন্য যারা এরকম কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
শনিবার গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে ঘর পাওয়ার আবেদন করতে এসেছিলেন তাপসি রায় নামে এক মহিলা। তিনি জানান, ‘ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের পাশের এক জেরস্ক দোকান থেকে তিনি ৭০ টাকা দিয়ে ফর্ম টি কিনেছি। শুনেছিলাম এই ফর্মটি পূরন করে জমা দিলে আবাস যোজনায় নাম ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ’ প্রধানপাড়ার বাসিন্দা ললিতা রায়, প্রশান্ত রায় জানান, ‘ এক বিজেপি নেতা আমাদের বলেন যে একটি ফর্ম পূরণ করে তাকে জমা দিলে ঘর পাওয়া যাবে। আমরা সেই ফর্মটি পূরণ করে ওনার হাতে জমা দেই। এর জন্য আমাদের কিছু টাকাও খরচ হয়। ’
বিজপির ধূপগুড়ি উত্তর পূর্ব মন্ডল সভাপতি কৌশিক নন্দী বলেন, ‘ তৃনমূল এই গ্রাম পঞ্চায়েতে দুর্নীতিতে নজির তৈরি করেছে , সেই দুর্নীতি ঢাকতে ওরা আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আসলে গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসের সামনে জেরক্স দোকান থেকে এই ভুয়ো ফর্ম বিলি করা হচ্ছে এবং তার কাটমানি খাচ্ছেন তৃনমূল নেতারা। ’
অন্যদিকে তৃণমূলের সাঁকোয়াঝোরা -১ অঞ্চল সহ সভাপতি সাহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ বিজেপি নেতারা গ্রামের মানুষদের ভুল বুঝিয়ে তাদের মধ্যে একটি ভুয়ো ফর্ম বিলি করে মানুষ কে প্রতারিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই ভাওতা মানুষ বুঝে গিয়েছেন। জেরস্ক দোকান থেকে ফর্ম বিক্রি করার ঘটনায় দলের কোন যোগ নেই। আমরা এব্যাপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। ’