পুবের কলম ওয়েব ডেস্কঃ সামনে পঞ্চায়েত ভোট। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে রাজ্যে ঘাসফুলের মেলা দেখা গেলেও রানাঘাট সংসদীয় ক্ষেত্রে ভরাডুবি হয় তৃণমূলের। তার পর এই প্রথম এত বড় মাপের সভা হল মতুয়া গড়ে। নদিয়ার রানাঘাটের ‘মিলন মন্দির’ মাঠে দুপুর দুটো থেকে অভিষেকের সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন কারণে অভিষেকের এই সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহল। নদিয়ার সভা থেকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে আর্জি জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, বলেন কোনও ভুল হলে ক্ষমা করবেন, কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। সঙ্গে আরও প্রশ্ন করেন, ‘তৃণমূলের থেকে রানাঘাট মুখ ফিরিয়ে নিল কেন?’
এদিনের সভায় ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কি বললেন, দেখে নিন এক নজরে,
১ ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদের বক্তব্য, কেন্দ্রের মোদি সরকার ইডি-সিবিআই লাগিয়ে তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। তবে দলের কিছু লোকের জন্য তৃণমূল থেকে মুখ ফিরিয়েছেন রানাঘাটবাসী। ভুল হলে ধরিয়ে দিন। শাসন করুন। ঘরের ছেলের মতো দেখুন। তবে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না বলেও আর্জি জানান তিনি। করোনার সময়ে যখন সবাই মুখ ফিরিয়েছে, তখন তৃণমূল কংগ্রেস আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
রানাঘাটের লোকসভায় কেন তৃণমূলের খারাপ ফল। তৃণমূলের থেকে রানাঘাট মুখ ফিরিয়ে নিল কেন?
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। সমস্যা হলে নিজের মনে করে জানাবেন। কিছু প্রধান- উপপ্রধানের অপদার্থতার জন্য তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মুখ ফেরাবেন না। যারা বেইমানি গদ্দারি করেছেন সব হিসেব আছে আমার কাছে। সময় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রানাঘাটে আর একটা সুযোগ দিন। সব অসুবিধা দূর করবো। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত রানাঘাটের মানুষের পাশে থাকবো।
২ সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এই ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে। মস্তানি, গাজোয়ারি করলে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। ভোট অবাধ শান্তিপূর্ণ ভাবে হবে এটা আমার গ্যারান্টি বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
৩ তাতলার ১ গ্রাম পঞ্চায়েত ধনিচার প্রধানের ইস্তফা দেওয়ার কথা বলেন তিনি। আরও জানান, প্রধানকে জিজ্ঞাসা করবো শেষ কবে পঞ্চায়েতে গিয়েছিলেন। পঞ্চায়েত যাতে আপনাদের স্বার্থে কাজ করে, তাঁর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।
৪ এর পরই জেলার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ে একের পর এক বার্তা শোনা যায় অভিষেকের মুখে। তাঁর প্রশ্ন ছিল,’ জেলার পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নিয়ে আপনারা খুশি? ভোট অবাধ-শান্তিপূর্ণ হবে, এটা আমার গ্যারান্টি।’ সঙ্গে হুঙ্কার, ‘যাঁরা বেইমানি-গদ্দারি করেছেন, সব হিসাব আছে।’ পঞ্চায়েত ভোটের আগে কোনও ধরনের গাফিলতি যে বরদাস্ত করা হবে না, সে বার্তা নদিয়াতেও দিলেন অভিষেক। এর আগে কাঁথির জনসভায় কার্যত একসুর শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায়।
৫ ঠিকাদারদের জন্য তৃণমূলের দরজা বন্ধ। দলের সঙ্গে বেইমানি করলে ছেড়ে কথা নয়, কড়া বার্তা অভিষেকের।
৬ কয়েকজন প্রধান, উপপ্রধানের অপদার্থতার জন্য আপনারা তৃণমূলকে রানাঘাট থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। এবার প্রধান কে হবে সেটা ঠিক করবেন আপনারা, কোনও নেতা নয়। যোগ্য প্রার্থী মনে করলে ফোন করে জানান। আগামী পঞ্চায়েত হবে মানুষের পঞ্চায়েত। কোনও দাদা দিদির পা ধরে পঞ্চায়েত টিকিট পাওয়া যাবে না।
৭ জয় শ্রী রাম বললে পেট্রোল গ্যাসের দাম কমে না। জয় বাংলা বললে খাবার মেলে।
৮ সিএএ এর নামে বোকা বানানো হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অসম তার জলজ্যান্ত উদাহরণ।
৯ জগন্নাথ সরকারকে বিজেপি আর টিকিট দেবে না। কাজেই রানাঘাটে আমাদের আর একবার সুযোগ দিন।
উল্লেখ্য, একদিকে নবান্নে শাহ – মমতার বৈঠক, অন্যদিকে নদিয়ায় অভিষেকের হুঙ্কার নিয়ে রীতিমত তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। নদিয়ার বিজেপির শক্ত ঘাটিতে তাঁর এদিনের জনসভা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা লাভবান হতে চলেছে সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।